Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা ঝুঁকি নিয়ে চা বাগানে শ্রমিক, সাহেবরা হোম কোয়ারেনটাইনে!


১ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫৯

ফাইল ছবি

মৌলভীবাজার: করোনভাইরাসের (কোভিড-১৯) আতঙ্কে যখন বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব তখন ঝুঁকি নিয়েও মৌলভীবাজারের প্রায় বেশিরভাগ চা বাগানেই কাজ করে যাচ্ছেন প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। করোনা রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সব সেক্টরেই সরকারের নির্দেশে ছুটি কার্যকর হলেও চা বাগান বন্ধ রাখেনি মালিকরা। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে টানা দুদিন কর্মবিরতির পর বুধবার (১ এপ্রিল) বিকেলে সাতগাঁও চা বাগানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন

করোনায় সংক্রমণ রোধে সরকার এর আগে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সেই ছুটি এখন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়বে বলে জানা গেছে। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলার প্রায় বেশিরভাগ চা বাগানে ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন চা বাগানে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষাধিক শ্রমিক।

জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় মোট চা বাগান ৯২টি। এসব বাগানে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। কিন্তু তাদের পাশে এগিয়ে আসছেনা না কোনো সামাজিক সংগঠন। তাছাড়া চা বাগানের মালিকদের পক্ষ থেকেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো উদ্যোগ। দেশের সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এখনও ছুটি পায়নি চা শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানসহ দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিক কাজ করেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ চা বোর্ড ২৫ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাগানগুলোতে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়। চিঠিতে চা বোর্ডের দেওয়া আট নির্দেশনায় বাগানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা ও শ্রমিকদের ছুটি প্রদানের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। এই চিঠি পাওয়ার পর কিছু বাগান মালিক সামাজিক দূরত্ববজায় রাখাসহ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করলেও তা অনেকটাই কাগজে কলমে। এখনও দল বেঁধে কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। হঠাৎ কারও মুখে মাস্কের দেখা মিললেও তারা জানেন না এর ব্যবহারবিধি। নেই পর্যাপ্ত হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও।

চা শ্রমিকের সন্তান অঞ্জন ভৌমিক সারাবাংলাকে জানান, ‘সমস্ত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সরকার ছুটি দিয়েছেন বাড়িতে থাকার জন্য। মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার থেকে বাঁচার জন্য। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এ রকম অসম আচরণ কেন করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে সাতগাঁও চা বাগান বস্তির পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ কৈরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাগানের সাহেবরা হোম কোয়ারেনটাইনে। আর আমরা চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করে যাচ্ছি। করোনা কি শুধু সাহেবদের সংক্রমণ করে? আমরা যদি সংক্রমিত হই তাহলে এটাতো দেশের জন্যই ক্ষতি। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা সংক্রমিত হবে।’

চা শ্রমিক নিয়তি বাউরি বলেন, ‘করোনায় কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের ঠিকই বের হতে হয়। বাগানে কাজ করতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের সহযোগিতা আমরা পাইনি। নিরাপদে থাকার জন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে কোনো আর্থিক সহযোগিতা আমরা পাই না ।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের আসাম রাজ্যের ৮৬০টি চা বাগানের কাজ বন্ধ ঘোষণার খবর এলে তারাও এই দাবি তোলেন বলে জানান সাতগাঁও পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি কাজল কালিন্দী।

এদিকে সাতগাঁও চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এতে আমাদের কিছু করার নাই। সরকারই চা শ্রমিকদের সাধারণ ছুটির বাইরে রেখেছে। আমরা কী করব, বলেন? সরকার যদি চা শ্রমিকদের ছুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আমরা তা মানতে বাধ্য।’

চা বাগান মৌলভীবাজার শ্রমিক হোম কোয়ারেনটাইন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর