থানা হেফাজতে মৃত্যু: ওসিসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
২ এপ্রিল ২০২০ ১০:৫৬
ঢাকা: বরগুনার আমতলী থানা হেফাজতে থেকে শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি মো. আবুল বাশারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমতলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের দায়ের করা অভিযোগের আলোকে বরগুনার পুলিশ সুপারের নির্দেশে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) সারাবাংলাকে জানান তিনি।
ওসির রুমে ঝুলন্ত লাশ: নির্যাতনের চিহ্ন শরীরজুড়ে
আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান জানান, গতকাল রাতে বরগুনার পুলিশ সুপার তার সরকারি ইমেইল থেকে আমাকে মামলা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ এর ১৫ ধারা মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে মেইল এ পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমতলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, আইনজীবীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তার আলোকেই আমরা জোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গত ৩০ মার্চ রাতে সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যাহার কৃত ওসি মো. আবুল বাশারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু(নিবারণ) আইন-২০১৩ এর ৬ ও ৭ ধারা মোতাবেক অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ অভিযোগ দায়ের করে বরগুনার পুলিশ সুপারকে মেইল করেন।
ওইদিন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলে ছিলেন, শানু হাওলাদার গত ৪দিন হল মারা গেছেন। এ পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এ কারণে দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি লিখিতভাবে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাত হাসান বলেন, সারাদেশ লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সোমবার সন্ধা ৬টা ৩৭ মিনিটে বরগুনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সরকারি ইমেইলে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।
জানা যায়, গত ২৩ মার্চ শানু হাওলাদার (৫২) নামের ওই ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে রাত ১১টার দিকে বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালীর নিজ বাড়ি থেকে ধরে আনে আমতলী থানার তদন্ত ইন্সপেক্টর (ওসি) মনোরঞ্জন মিস্ত্রির নেতৃত্বে থাকা একদল পুলিশ। এরপর টানা তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখলেও শানু হাওলাদারকে আদালতে সোপর্দ করেননি ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন। এমনকি থানায় নিয়ে আসার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেয়নি।
শুধু তাই নয়, শানু হাওলাদারের অপরাধ কি সেটি জানতে স্থানীয় নির্বাচিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থানায় গেলেও তাকেও শানুর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি তার বিরুদ্ধে কি অপরাধ রয়েছে সে বিষয়টিও ‘জানা নেই’ পুলিশের। শানুর সঙ্গে দেখা না করে রাতে বাড়ি ফেরার পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই চেয়ারম্যান শুনতে পান শানু আত্মহত্যা করেছে। চেয়ারম্যানের দাবি, ‘এটি কোনভাবেই আত্মহত্যা নয় বরং হত্যা।’
গত ২৬ মার্চ থানা হেফাজতে শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও সহকারী উপপরিদর্শক আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
ময়নাতদন্ত শেষে ২৬ মার্চ রাত ১১টার দিকে শানু হাওলাদারের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।