করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কর্মহীনদের পাশে তরুণেরা
৩ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৪৩
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ রয়েছে সরকারের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি সাধারণ ছুটিতে গেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানাও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ। এই সংকটময় মুহূর্তে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার তরুণেরা। খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, স্যাভলন বিতরণ করছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে গ্রুপ করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন কেউ কেউ। আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে যার সাধ্যমত বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। রাজধানী ঢাকার মতো চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা শহরগুলোতেও এমন উদ্যোগ দেখা গেছে।
তরুণদের উদ্যোগের বিষয়ে ফেসবুকে ‘চাল, ডাল, আলু। বাঁচার জন্য। ৪৫০ টাকায় এক সপ্তাহ’ নামে গ্রুপের উদ্যোক্তা ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গত ২৫ মার্চ থেকে শুরুটা নিজের উদ্যোগেই করেছিলেন। প্রথমে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বস্তিতে ২৫ পরিবারকে ৫ কেজি চাল, ডাল, আলু বিতরণ করে এই কার্যক্রম শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘এই বিশাল সংখ্যক অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করা তার একার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই ফেসবুকে গ্রুপ খুলে বন্ধুদের আহ্বান জানান। আর এতে প্রচুর সারা মেলে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশো স্বল্প আয়ের মানুষ যেমন, রিক্সাচালক, গৃহকর্মী, মুচি যাদের নিত্যদিনের আয়ে সংসার চলে, তাদের মাঝে ৫ কেজি চাল, ডাল আর আলু বিতরণ করা হচ্ছে।’ অর্থ সংগ্রহের ওপর এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
কলাবাগান বার্তা ও কলাবাগান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে শতাধিক পরিবারকে খাদ্য বিতরণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে সোসাইটির সদস্য মাসুদ করিম জানান, ৩০ ও ৩১ মার্চ ১০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন তারা। শিগগিরই আরও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের জেলা শহরগুলোতেও স্থানীয় তরুণেরাও এই উদ্যোগ নিয়েছেন। ‘প্রজেক্ট আহার’ নামের সংগঠনটি কাজ করে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায়। উদ্যোক্তা ডা. মাহবুব জানান, এই সংগঠন দীর্ঘ সাত বছর ধরে অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে আসছে। এবার মহামারি করোনাভাইরাস আক্রান্ত শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ব্যতিক্রমধর্মী সহযোগিতা শুরু করেছেন। হিন্দু, খ্রিস্টান এবং মুসলিম এই তিন ধর্মের অসহায় কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা করছেন। চাল, ডালসহ মোট নয় আইটেম দিচ্ছেন প্রত্যেক পরিবারকে। ২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৭ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন তারা। ভবিষ্যতে ফান্ড সংগ্রহ করে আবার বিতরণের কথা জানান তিনি।
চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামির ছিন্নমূল, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, লালখান বাজার এবং দেওয়ান ঘাট বস্তি এলাকায় ‘স্মাইল বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি কাজ করছে। এ পর্যন্ত দু’শোর বেশি পরিবারকের তারা নিজেদের উদ্যোগে চাল, ডালের পাশাপাশি শুকনো খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও সহযোগিতা করছেন। এশিয়ান টেলিভিশনের সিনিয়র প্রতিবেদক লাবণ্য ভূইঞা জানান, তিনি তার দুই মাসের বেতনের অর্থ নিজ এলাকা দোহারের ৩৫ পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন।
বরিশালে রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে ২০ পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও খুলনা, রাজশাহী, সিলেটে ব্যক্তিগত এবং সংঘবদ্ধভাবে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অন্যদিকে, বরবরেই মতোই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্রসংগঠনগুলোও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। তারা খাদ্যসামগ্রী বিতরণের পাশপাশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।