বৈশাখের অনুষ্ঠান স্থগিতে ‘লোকসান’ ২ হাজার কোটি টাকা
৩ এপ্রিল ২০২০ ২১:৩৫
ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন বিপণি-বিতান, শো-রুম এবং সব দোকানপাঠ বন্ধ থাকায় শুধু পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই হাজার কোটি টাকা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সারাবছর বিভিন্ন উদ্যেক্তারা নানা দেশীয় জিনিস তৈরি করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশীয় পোশাক, তাঁতের কাপড়, জামদানি শাড়ি, নকঁশিকাথা, বিভিন্ন পুতুল, মাটির তৈরি জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডিক্রাফট।
এইসব পণ্যসামগ্রী বেচাকেনার জন্য তারা অপেক্ষা থাকেন কখন আসবে পহেলা বৈশাখ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসমাগম এড়াতে স্থগিত করা হয়েছে পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক সব অনুষ্ঠান। দোকানপাট বন্ধ এবং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান স্থগিত উদ্যোক্তারা দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এবারের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুই হাজার কোটি টাকার বেচাকেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে।
সারাবছর ধরে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরি করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করার পর হঠাৎ করোনার প্রভাবে দোকানপাঠ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আটকে পড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। একইসঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে এ সব খাতের ৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী। যাদের ৮০ শতাংশ নারী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যেক্তারা সরকারের কাছ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রণোদনা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি ও অঞ্জনস শোরুমের মালিক শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা। সে অনুযায়ী আমরা আমাদের সব কিছু রেডি করেছিলাম। আমরা যখন বিক্রিটা শুরু করব, তখনই একটা বিপদে পড়ে গেলাম।
তিনি বলেন, আমাদের পণ্যগুলো বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পণ্যগুলো বৈশাখে বিক্রি করতে পারছি না। পণ্যগুলোর সঙ্গে অনেক জড়িত, বিশেষ করে যাদের কাছ থেকে কাঁচামাল নিয়েছি, তাদের পেমেন্ট করতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের বেতনভাতা দিতে হবে। সব নিয়ে আমরা বেশ অসুবিধার মধ্যেই রয়েছি। কিছুদিন পর রোজা, তারপরেই ঈদ। ঈদের অনেক কাজ চলছিল। সেটি নিয়েও আমরা আতঙ্কে আছি।
তিনি বলেন, এই খাতে আমাদের ফ্যাক্টরি, শোরুম, মাল সাপ্লাইয়ার, তাঁত শ্রমিক, সেলাইকর্মীসহ ৫ লাখের বেশি লোক জড়িত। এদের ৮০ শতাংশ মহিলা। এদের বড় অংশই ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও কুমিল্লা অঞ্চলে বসবাস করেন। আমাদের সঙ্গে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীও বিপদে পড়েছেন। ফলে পুরো সেক্টর এখন বিপদগ্রস্ত।
অঞ্জনস শোরুমের মালিক শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চাইব। যেন আমরা শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন দিতে পারি।’
অন্যদিকে দেশীদশের প্রতিষ্ঠান সাদা কালো শোরুমের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, পহেলা বৈশাখে কেচাকেনা বন্ধ থাকায় আমরা ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদের বৈশাখের জন্য যে পণ্যগুলো তৈরি করা হয়েছে, সে পণ্যগুলো বিক্রি না হওয়ায় আটকে যাবে। এইসব পণ্য বিক্রি করতে একটা দীর্ঘসময় লেগে যাবে।পণ্য বিক্রির টাকা থেকেই আমরা শোরুম ভাড়া, শ্রমিক, প্রোডাক্ট তৈরিকারকদের বেতন দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশীয় পোশাকের সঙ্গে সরাসরি পাঁচ লাখ শ্রমিক জড়িত। এছাড়াও পরোক্ষভাবে জড়িত আরো ১০ থেকে ১৫ লাখ তাঁতি রয়েছে। এছাড়াও জুয়েলারি প্রোডাক্ট, হ্যান্ডিক্রাফটসহ সব মিলিয়ে লোকের সংখ্যা ২০ লাখের মতো হবে। ফলে আমরা শ্রমিকদের নিয়ে খুব শঙ্কিত।
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী এপ্রিল, মে ও জুন মাসের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা দাবি করছি।’