করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
৪ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৫৮
ঢাকা: কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট অভিঘাত মোকাবিলায় দুই বছরব্যাপী একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিতসহ ৮ দফা পরামর্শ দিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সব পরামর্শন দেন। কিন্তু এ সব পরামর্শের অধিকাংশই সঠিক নয় বলে মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম
তিনি জানান, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অবশ্যই করোনার অভিঘাতের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এক কথায় বলা যায়, করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় প্রস্তুত হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। শুক্রবার সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জোসনা জামান
সারাবাংলা: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দুই বছর স্থগিত এবং তা নতুন করে লেখার দরকার আছে কি?
শামসুল আলম: অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শুরু হবে ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে। এরইমধ্যে পরিকল্পনা তৈরির কাজও চলছে। এর মাঝে করোনাভাইরাসের থাবা পড়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশে সমস্যা নয়, সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তার আগেই চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং ইইউতে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছিল। এখন হঠাৎ করেই করোনার যে আঘাত এসেছে। এতে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কেমন হবে সেটি এখনো সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে দেশের সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে গেছে। হঠাৎ করেই শিল্প কারখানা প্রায় বন্ধ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা বেকারত্বের সম্মুখীন। এসব বিষয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতিতে একটি ক্ষতিকর প্রভাব অবশ্যই আছে। হয়ত অর্থনৈতিক মন্দায় রূপ নেবে। সেসব বিবেচনায় নিয়েই তৈরি হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনা পুনঃলিখনের বিষয়টি তথ্যভিত্তিক নয়। তাছাড়া বাংলাদেশ পরিকল্পনার মাধ্যমেই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চমৎকার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি এবং এখনও করে চলেছি। তাই এ মুহূর্তে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দুই বছর স্থগিতের পরামর্শ অপ্রাসঙ্গিক। আবার ২০২২ সালে নতুন কোনো আঘাত আসবে কিনা সেটিও তো আমরা জানি না। কাজেই স্থগিতকরণ কোনো সমাধান নয়।
সারাবাংলা: করোনার জন্য আলাদা কোনো পরিকল্পনা প্রয়োজন আছে কিনা?
শামসুল আলম: করোনার শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার সহায়তা ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। গরিব মানুষদের জন্য ভিজিডি ও ভিজিএফ সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সুদ হার কমানোর পদক্ষেপ আছে। বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক অভিঘাত সামাল দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্য শিষ্টাচার মেনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মাধ্যমেই তো করোনা অভিঘাত মোকাবিলার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তাহলে আলাদা পরিকল্পনার করলে মূল পরিকল্পনার সঙ্গে তা অসঙ্গতি তৈরি হবে। এসডিজি বাস্তবায়ন পথ হারাবে। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ে দেশ হওয়া বিঘ্নিত হবে। ২০৪১ সালের উন্নত দেশ হওয়া ভিত্তি পরিকল্পা হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এটি বাধাগ্রস্ত করা হবে। সব লক্ষ্যই বাধাগ্রস্ত হবে। ধারাবাহিক পরিকল্পনা না থাকলে বরং মন্ত্রণালয়গুলো যে যার মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। এতে পরিকল্পনাবিহীন হ য ব র ল অবস্থার তৈরি হবে। তাই পরিকল্পনার পথ পরিহার বা স্থগিতের পরামর্শ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অবান্তর।
সারাবাংলা: কমপক্ষে তিন বছরের জন্য এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়কাল বিলম্বিত করার বিষয়ে কি বলবেন?
শামসুল আলম: এটি হাস্যকর। কেননা এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে। ঋণমান বৃদ্ধি পাবে। ফলে এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) ব্যাপক বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। ঋণ প্রাপ্তির নানা দরজা খুলে যাবে। তিন বছর পিছিয়ে গেলে কি লাভ হবে তা আমি জানি না। তবে এ কথা ঠিক যে, এলডিসি উত্তরণ ঘটলে জিএসপি সুবিধা বাতিল হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে জিএসপি প্লাস পাওয়ার সুযোগ তো আছে। এছাড়া ডব্লিউটিও এর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে নেগোশিয়েশনের কাজ চলছে।
সারাবাংলা: এসডিজি অর্জনের সময়কাল ২০৩০ থেকে ২০৩৫ এ নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে জোর প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন কিনা ?
শামসুল আলম: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এডিজি) একটি আন্তর্জাতিক এজেন্ডা। এটি জাতিসংঘের নিজস্ব এজেন্ডা। করোনা পরিস্থিতিতে যদি এর কোন সংস্কার প্রয়োজন হয় তাহলে সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেই সেটি আলোচিত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগবাড়িয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।