Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রান্তিক পর্যায় থেকেও যেভাবে শুরু হচ্ছে কোভিড-১৯ পরীক্ষা


৪ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪৮

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে বাংলাদেশে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ৬১ জনের মধ্যে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে এখনো মৃদু আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এ কারণে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ানো হয়েছে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য ল্যাবের সংখ্যাও।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণকে কীভাবে এই পরীক্ষার আওতায় আনা যাবে তা নিয়ে আছে অনেক শঙ্কা। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে তাদের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে সেটিও সম্ভব হবে। আর এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, সারাদেশেই কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে প্রধান প্রধান শহরগুলো বাদেও দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা জনগণকেও আনা যাবে এই কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের আওতায়। এ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের স্যাম্পল সংগ্রহ করে দ্রুত তা পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা যাবে।

প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ কিভাবে স্যাম্পল পরীক্ষা করাবে এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষদের নমুনা সংগ্রহের জন্য আমরা তিন ধাপের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’

১. স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে
২. জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে এবং ল্যাব সুবিধা আছে এমন স্থানে যোগাযোগ করে।
৩. স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

বিজ্ঞাপন

প্রথম ধাপের ব্যাখ্যা করে ডা. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের যে কোনো অঞ্চলে থাকা কারও যদি মনে হয় তার মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শঙ্কা আছে তবে সে স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বর বা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করতে পারে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হান্টিং নম্বর ০১৯৪৪৪৩৩৩২২২ অথবা ১০৬৫৫ নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারে। এসব নম্বরে যদি কেউ যোগাযোগ করে তবে সেখান থেকেই উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে একজন টেকনিশিয়ান পাঠিয়ে দেওয়া হবে নমুনা সংগ্রহ করে আনার জন্য।’

দ্বিতীয় ধাপের ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেশে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য ল্যাবের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কিছু হাসপাতালেও যুক্ত করা হচ্ছে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাব। একইসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় চালু করা হয়েছে হটলাইন। এই সময় এখানে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ল্যাব সেল থেকে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে থাকে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নমুনা সংগ্রহের জন্য বলে দেওয়া হবে।’

তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তবে তারাও নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে পারবে বলে জানান ডা. হাবিবুর রহমান।

ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রায় সকল অঞ্চলের বিভিন্ন ল্যাব টেকনিশিয়ানদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে এ বিষয়ে সবাইকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে তারা কোথায় বা কোন ল্যাবে পরীক্ষার জন্য দিবে সেটির বিষয়েও বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আসলে সদিচ্ছার কোনো অভাব নাই সরকারের। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত দক্ষ লোকবলও আছে যাতে করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরীক্ষা করাতে কোনো রকমের সমস্যা না হয় কারও।’

আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকায় তিনটি ও এর বাইরে তিনটি এবং ২০ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকার ভেতরে চারটি ও ঢাকার বাইরে আরো ছয়টিসহ মোট ২৮টি স্থানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে ঢাকায় সাতটি ও ঢাকার বাইরে তিনটি প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান ডা. হাবিবুর রহমান।

এ দিকে প্রান্তিক পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্য ডা. ইকবাল আরসালান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে যোগাযোগের জন্য হান্টিং নম্বর দেওয়া হয়েছে। এই নম্বরগুলো থাকছে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে। ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকরা সংক্রমণ হওয়ার শঙ্কা আছে এমন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ল্যাবরেটরিতে ফোন করবে। এছাড়াও জেলা পর্যায়ের সিভিল সার্জনদের এবং উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকা ব্যক্তির ঠিকানা দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে বলবে।’

তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আর তাই এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা শুরু হবে এবং আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সারা দেশে ২৮টি পিসিআর ল্যাব পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকবে। তিনি বলেন, ল্যাবের পাশাপাশি আমরা কর্মী সক্ষমতা বাড়িয়েছি।’

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নিয়াগপ্রাপ্ত সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসাররা (এসএমও) সন্দেহজনক কেস শনাক্ত করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেবেন। ২৯তম বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের মধ্য থেকে ১০ জন করে ডাক্তার প্রতি জেলায় পদায়ন চলছে। যারা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং কন্টাক ট্রেসিংয়ে কাজ করবেন। এছাড়া স্যাম্পল কালেকশনের জন্য ইপিআই কর্মী নিয়োগ যুক্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও হাসপাতাল সংক্রমণ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যেই ৭১০ জন চিকিৎসক ও ৪৩ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া অনলাইনে ৯ হাজার ৬৯৫ জন চিকিৎসককে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহন বিষয়ে একাধিকবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ মার্চ ১৯০ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিকেল টেকনোজলিস্টরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান ও ইপিআই সার্ভিলেন্স টিমের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজনদের বাড়ী থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন। এরপরে সেই নমুনাগুলো কাছে থাকা পিসিআর ল্যাবে পাঠিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

করোনা করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ প্রান্তিক পর্যায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর