করোনা প্রতিরোধে ৪ শিক্ষার্থীর রোবট ‘সেবক’ তৈরি
৪ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪৯
ঢাকা: চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এখন বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। বর্তমানে ভাইরাসটির আগ্রাসী আক্রমণের কারণে সাধারণ রোগিদেরও চিকিৎসাসেবা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসকরাও সঠিকভাবে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের সহায়তায় বাংলাদেশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল বিভাগের চার শিক্ষার্থী ‘সেবক’ নামের একটি রোবট উন্নয়ন করেছেন। এই রোবটটি দিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করে একজন চিকিৎসক অসংখ্য রোগিকে সেবা দিতে পারবেন বলে ওই শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী মাইনুল হাসান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মাহাদি এবং সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ আল আমিন ও আশরাফুর রহমান- এরা চারজনই প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। জানা যায়, গোটা বিশ্ব যখন করোনা আক্রান্তে দিশেহারা তখন এই চার শিক্ষার্থী নিজেদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভাইরাসটি প্রতিরোধে কোনো কিছু উদ্ভাবনের প্রতিজ্ঞা করেন। এ জন্য তারা গঠন করেন টিম সেভিয়র নামে একটি দল।
https://youtu.be/oVJzN02hnmA
টিম সেভিয়রের আব্দুল্লাহ আল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, “রোবট ‘সেবক’র মূল উদ্দেশ্য হলো চিকিৎসককে রোগীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রেখে, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে করোনা (কোভিড-১৯) শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে কোয়ারেনটাইন পর্যন্ত সার্বিক তত্ত্বাবধানে সহায়তা করা। চীনে করোনা আক্রান্ত রোগীকে এভাবেই সেবা দেওয়া হয়।’
আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “রোবট ‘সেবক’-এ একটি কন্ট্রোল স্টেশনে অবস্থান করে একজন চিকিৎসক বহু সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন। কন্ট্রোল স্টেশনের জন্য হাসপাতালের একটি ছোট রুম এবং একটি ল্যাপটপই যথেষ্ট।”
“রোবট ‘সেবক’র কাজকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করেছি” জানিয়ে আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই রোবট দিয়ে রোগী শনাক্তকরণ কাজ করা সম্ভব। প্রয়োজনে রোগীর প্রাথমিক কিছু নমুনা (কফ, মূত্র) সংগ্রহ করে গবেষণাগার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবে এই রোবট। কোয়ারেন্টাইনে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে সেবক। এছাড়া হাসপাতালে থাকা রোগীর প্রয়োজনীয় খাবার এবং ওষুধও সরবরাহ করতে পারবে এই রোবট।’
জানা গেছে, সেবক নামের এই রোবটটি বানাতে শিক্ষার্থীদের প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ লেগেছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে খরচ অনেক কমে আসবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা ক্রান্তিকালের এই সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত নিরাপদ সেবা সরঞ্জাম নাই। করোনা রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ টেস্ট কিট না থাকায়, একদিকে যেমন চিকিৎসকরা নির্ভয়ে সেবা দিতে পারছেন না, ঠিক তেমনি করোনা আতঙ্কে সাধারণ রোগিরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন সময়ে তারা দেখতে পান যে, চীনের একদল বিশেষজ্ঞ রোবট বানিয়েছে এবং সেই রোবট দিয়ে পর্যাপ্ত নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চীনের বিজ্ঞানীদের বানানো ওই রোবট দেখেই এই চার শিক্ষার্থী তাদের আদলে নিজস্ব রোবট বানানোর সিদ্ধান্ত নেন গত ১৯ মার্চ। এরপর তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে গত ২৮ মার্চ পান সফলতা।