প্রণোদনা প্যাকেজে ‘আশার আলো’ দেখছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা
৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:৪৭
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে ‘আশার আলো’ দেখছেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রণোদনা প্যাকেজ দুর্যোগের মধ্যে এবং পরবর্তী সময়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে প্রণোদনার সুফল যাতে সব সেক্টরে সঠিকভাবে পৌঁছে সেদিকে নজর রাখতে হবে কঠোরভাবে।
রোববার (৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা দেশের জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত পাঁচটি প্যাকেজ রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর আছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ সুবিধা, এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম চালুর ঘোষণাও আছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি যুগান্তকারী অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের দুর্যোগ শুরুর পর ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। প্রণোদনা ঘোষণার মাধ্যমে শিল্প বাঁচানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেখানে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ প্রতিবেশি ভারত এখনো কোনো প্রণোদনা ঘোষণা করতে পারেননি, সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে আমরা বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পাচ্ছি।’
প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক আরও বলেন, ‘শুধু এক্সপোর্ট কিংবা সার্ভিস সেক্টর নয়, এই যে দেশের মধ্যে এত বড় বড় হোটেল হয়েছে, তাদেরও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বিমান পরিবহনকে বাঁচাতে হবে। এখন এই প্রণোদনার যাতে অপব্যবহার না হয়, নয়-ছয় যাতে না হয় সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে। এটা ঠিক রাখতে পারলে ইন্ডাস্ট্রি টিকে যাবে, শ্রমিকরা চাকরি হারাবে না, বেতন পাবে।’
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবিশ্বে একটা দুর্যোগ চলছে। আমাদের সরকারেরও আয় কমে গেছে। বন্দর প্রায় বন্ধ, কাস্টমসে রাজস্ব আয় নেই, রেমিট্যান্স আসছে না। সরকারের আয়ের সব পথ তো রূদ্ধ হয়ে গেছে। এরপরও রাষ্ট্রীয়ভাবে যে প্রণোদনা প্যাকেজটা দেওয়া হয়েছে, এটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। আমি কত টাকা পেলাম বা পেলাম না সেটা বড় কথা নয়। দুর্দিনে রাষ্ট্র যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটাই বড় কথা।’
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা একটা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আশা করব, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এই প্রণোদনা প্রকৃত এফেক্টেড সেক্টরে যাবে।’
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রণোদনাকে যেন কেউ অনুদান না ভাবে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এটা একটা সফট লোন অর্থাৎ আপদকালীন সুবিধা হিসেবে স্বল্প সুদে ঋণ। কারখানার শ্রমিকরা যেন এটাকে অনুদান মনে না করেন। এটা মনে করলে শ্রমিকদের বেতন দিতে গিয়ে ফ্যাক্টরিগুলো বিপদে পড়বে। তবে এই প্রণোদনার কারণে আপাতত অনেক মিল-ফ্যাক্টরি বেঁচে যাবে। বন্ধ হবে না। শ্রমিকরাও চাকরি হারাবে না। আগামী জুন পর্যন্ত অন্তঃত কোনো সংকট হবে না। আর জুলাই থেকে হয়ত এই দুর্যোগও আর থাকবে না।’
পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক খুশি। কিন্তু বণ্টনটা পারফেক্ট ওয়েতে হচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে। আমরা শুধু রফতানিমুখী শিল্পই দেশের জন্য অবদান রাখছে বিষয়টা এমন নয়। আমরা যারা লোকাল ইন্ডাস্ট্রি করেছি, লোকালি বিজনেস করছি, রফতানি করি না, আমাদেরও অবদান আছে। তারা শুধু দেশের ম্যানপাওয়ার ব্যবহার করছে, তাদের বাকি লিঙ্ক কিন্তু বিদেশের সঙ্গে। আর আমরা দেশের ম্যানপাওয়ার ব্যবহার করে দেশের জন্যই প্রোডাক্ট বানাচ্ছি। সুতরাং তারাই শুধু এফেক্টেড সেটা নয়, আমরাও ভুক্তভোগী। দেশীয় শিল্পকেও বিবেচনায় নিতে হবে।’
অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলামও এই প্রণোদনা প্যাকেজকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবিশ্ব আজ মহামন্দার কবলে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও প্রচণ্ড সংকোচনের শিকার হবে। অর্থনীতিকে আগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে এই প্রণোদনাই শেষ পদক্ষেপ নয়। বরং এটাকে শুরু হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। রাষ্ট্রকে বড়-ছোট-মাঝারি আরও বিভিন্ন কল্যাণকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো এটা লোন কর্মসূচি। মনে হচ্ছে না, লুটপাট হবে। সম্ভাবনা না থাকলেও নজরদারির বিকল্প নেই।’
সারাবাংলা/আরডি/এমআই