সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণ, তাড়াহুড়ায় ব্রিফিং ছাড়লেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:১৪
ঢাকা: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কমিটি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে নাজেহাল হয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই কমিটি এখতিয়ার কতটুকু, কমিটি ঠিক কোন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে— গণমাধ্যমকর্মীদের একের পর এক এমন প্রশ্ন ধেয়ে যায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তড়িঘড়ি করে ব্রিফিং থেকে সরে যান তিনি। ফলে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি।
রোববার (৫ এপ্রিল) করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ব্রিফিংয়ের যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শুরুতেই জানান, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৮ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আরও কিছু তথ্য তুলে ধরেন। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- নতুন ১৮সহ করোনায় আক্রান্ত ৮৮, মোট মৃত্যু ৯ জনের
এ সময় এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পোশাক শ্রমিকরা শনিবার (৪ এপ্রিল) দলে দলে ঢাকা এসেছেন। তাদের এভাবে ঢাকায় আসার বিষয়টি শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে কি না?— সেই প্রশ্ন রাখেন ওই গণমাধ্যমকর্মী।
জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটি অবশ্যই শঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়। সেজন্যই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নির্দেশনা দিয়েছে, যাতে তারা কারখানা বন্ধ রাখবেন এবং শ্রমিকদের বেতনও দেবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা গতকাল গণমাধ্যম থেকে শ্রমিকদের ঢাকায় আসার বিষয়টি জানতে পেরেছি। আশা করি, আগামীতে এ ধরনের পরিস্থিতি আর হবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি হলে সংক্রমণ অবশ্যই বেড়ে যাবে।
পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ রাখার বিষয়টি মালিকদের সংগঠনগুলোকে বলা হয়েছিল কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। সেজন্য তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করার কোনো প্রয়োজন মনে করেনি। তবে এই কাজটি সঠিক হয়নি— এটা আমরা মনে করি।
আরও পড়ুন- সংক্রমণ বেশি হলে মোকাবিলা অসম্ভব: স্বাস্থ্য মহাপরিচালক
সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির প্রধান হিসেবে আপনিও (মন্ত্রী) আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতেন। আপনারা কেন এ ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো ভূমিকা পালন করেননি?— জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যখন বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, তখনই আমরা বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি। যেসব জায়গায় বললে কার্যকর কিছু হবে, সেখানে আমরা জানিয়েছি। সে কারণেই আমরা মনে করি যে কারখানা খোলা রাখা থেকে তারা বিরত থাকছে এবং লোকগুলো আবার ফিরে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় কমিটি প্রকৃতপক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি— আমরা এমন বলতে পারি কি না? এ প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টেলিভিশনে দেখানো ও গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে যে তারা কারখানা এই মুহূর্তে বন্ধ রাখবে এবং পরে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এই বিষয়টি আপনারা যেভাবে দেখেছেন, আমরাও সেভাবে দেখেছি।
বিষয়টিতে জাতীয় কমিটির কোনো ভূমিকা কেউ দেখতে পাননি। ফলে জাতীয় কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে কি না?— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় কমিটি ভূমিকা রাখছে বলেই বন্ধ হয়েছে। হ্যাঁ, এটা আপনারা বলতে পারেন যে, খোলার সময়ে (পোশাক কারখানা) এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলাপ হয়নি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ হয়নি।
শ্রমিকরা এখন কীভাবে বাড়ি যাবে— এমন প্রশ্নের জবাবেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ের উত্তর তো আমি দিতে পারব না।
এর আগে, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের আরেক মন্ত্রী বলেছেন, কারখানা বন্ধে কোনো নির্দেশনা নেই। সতর্কতার সঙ্গে কারখানা ৫ এপ্রিল থেকে কারখানা চলতে পারে। সাধারণ ছুটির মধ্যেও কারখানা খোলা রাখার অনুমোদন কিভাবে থাকতে পারে? এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
আরেক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, সংক্রামক ব্যধি আইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করা হয়েছে, যিনি যেকোনো দুর্যোগ বা মহামারির জন্য দায়ী থাকবেন। কিন্তু জাতীয় কমিটিতে তার অবস্থান ১০ নম্বরে। আইন করার সময় চার জন চিকিৎসক কমিটিতে ছিলেন। মহাপরিচালককে ক্ষমতা দেওয়া না হলেও তাকে দায়ী করার বিধান কিভাবে রাখা হয়েছে?
এরকম একের পর এক প্রশ্ন ছুটে গেলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। তিনি শুধু বলেন, কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখা বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছু করতে পারবে না।
তাহলে কি জাতীয় কমিটির এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা নেই— জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যারা এই কমিটিতে আছেন, এটা তাদের দায়িত্ব।
জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকেই তো এ সময় নির্দেশনা দেওয়ার কথা। তবে কি আমরা বলতে পারি জাতীয় কমিটিতে সমন্বয়ের অভাবে রয়েছে?— এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি। একই প্রশ্ন বারবার করবেন না।’ বলেই ব্রিফিং ত্যাগ করেন তিনি।
পরে অধিদফতরের অন্যান্য শাখার পরিচালকসহ মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ নিজেও ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আর ব্রিফিংয়ে যুক্ত হতে দেখা যায়নি।
জাতীয় কমিটি প্রশ্নবান সাংবাদিকদের প্রশ্ন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিং স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক