সরকারের উদাসীনতা জনগণকে অসহায় করে তুলেছে: রিজভী
৬ এপ্রিল ২০২০ ১৪:৩৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতা জনগণকে অসহায় করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত বিশ্ব থেকে যতটা না সুসংবাদ আসছে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে দুঃসংবাদ। একটি দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে, তো বাড়ছে অন্য দেশে। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা শেষ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করছে লাখের ওপর। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখের কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গত দুই দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। যা ভীতিকর পরিস্থিতির ঈঙ্গিত দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব এক অকল্পনীয় কঠিন সংকটের মুখোমুখি। আমরা আমাদের জীবদ্দশায়, এমনকি বিশ্বের হাতেগোনা সৌভাগ্যবান শতায়ু মানুষেরাও তাদের জীবদ্দশায় এমন ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হননি। বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করা হচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর হিসেবে। এমনও ঘোরতর সংকটেও বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা দেশের জনগণকে অসহায় করে তুলেছে।’
রিজভী বলেন, ‘সরকার বিষয়টি নিয়ে জনগণের সঙ্গে কেন এতো লুকোচুরি করছে—এটি বোধগম্য নয়। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, উন্নত কিংবা অনুন্নত দেশ যারাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েছে, তাদেরকে এখন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এখানেই আমাদের ভয়। দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীরা প্রতিদিন যেভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অযথা বাক্যবাণ নিক্ষেপ কিংবা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্ববিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন- তাতে মনে হয় সরকার এখনো পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারছে না।’
‘দল হিসেবে আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই সংকট আমরা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করতে চাই না। কারণ, এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বেছে বেছে মানুষকেই টার্গেট করছে না কিংবা করবে না। বরং একাধারে চলমান এই বৈশ্বিক ও জাতীয় সংকট বাংলাদেশে তো বটেই সারাবিশ্বের মানবজাতির অস্তিত্বের সংকট’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংকটে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরার পরও সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিংবা হাসান মাহমুদ কারণে অকারণে বিএনপির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কথার জবাব দিয়ে বিএনপি সময় নষ্ট করতে চায় না। আমরা বরং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, যেহেতু রাষ্ট্রীয় অর্থ, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র আপনাদের হাতে, সেহেতু এই মুহূর্তে দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো আপনাদের দায়িত্ব।’
রিজভী বলেন, ‘দেশের হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার যে আচরণটি করেছে, এটি কনো সভ্য রাষ্ট্র কিংবা সভ্য সরকারের আচরণ হতে পারে না। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবস্থানগত পার্থক্য সর্বোপরি সমন্বয়হীনতা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মর্মাহত করেছে। সরকারের পাশাপাশি এই খাতের উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বও চরম দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখা নিয়ে লুকোচুরি খেলা খুবই ন্যাক্কারজনক।’
তিনি বলেন, ‘চাকরি হারানোর ভয়ের কাছে মৃত্যুর ভয়ও হার মেনেছে পোশাক শ্রমিকদের কাছে। ফলে সরকারের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে শুরু করে কর্মস্থলে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক ট্রাকে, আবার কেউবা হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার কর্মস্থলে গেছে। এতে যে পরিমাণে জনসমাগম হয়েছে, তা সত্যিই আতঙ্কের।’
রিজভী বলেন, ‘ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষার কীট নাই। মধ্যবিত্তের পকেটে টাকা নাই। গরীবের পেটে ভাত নাই। চারদিকে কেবল নাই, নাই, নাই! এইসব মানুষদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করতে সরকার সারাদেশে যেসব চাল বরাদ্দ করেছে ইতোমধ্যেই তা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা লুটে নিয়েছে। ত্রাণের চাল চুরি ও লুটপাটের খবর প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদপত্রে। কারো কারো গুদামে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ ভিজিডির চাল, ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হচ্ছে। এতদিন হয়েছিল সরাসরি টাকা লোপাট, এখন হচ্ছে রিলিফ লোপাট।’
রিজভী জানান, বিএনপির ভারপ্রাাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ফেসবুক ফেক আইডি খুলে কিছু অসাধু ব্যক্তি নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। সেই ফেক আইডি থেকে গরীব মানুষদের সাহয্যের নামে বিভিন্নভাবে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারেক রহমানের কোনো ফেসবুক আইডি নেই। মানুষকে প্রতারিত করার জন্য একটি চক্র তারেক রহমানের নামে ভুয়া আইডি খুলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।