Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাকালেও এগোলো পদ্মাসেতুর ১ কিমি সড়কপথ


৮ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২৮

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও চলছে মেগা প্রকল্প পদ্মাসেতুর কাজ। ২৭টি স্প্যান বসানোর পাশাপাশি এগিয়ে গেছে সেতুর উপরের সড়কপথ। এরই মধ্যে সড়কপথের প্রায় এক কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে।

পদ্মাসেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা অংশে সেতুর সর্বশেষ ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর থেকে শুরু হয়েছিল সড়কপথের পাটাতন বসানো। ৮ এপ্রিল ৪২ থেকে ৩৭ নম্বর খুঁটি পযন্ত ৫টি স্প্যানে সড়কপথ বসে গেছে। নদীর ওপর দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত সড়কপথ আসতে প্রয়োজন ২ হাজার ৯১৭টি স্লাব। শেষ খবর পর্যন্ত পদ্মাসেতুতে রোডস্ল্যাব বসেছে ৪২৬টি। আর এতেই সড়কপথের এক কিলোমিটার দৃশ্যমান। এছাড়া সেতুর ভেতরে রেলপথ এগিয়েছে দেড় কিলোমটারের মতো। ৪২ থেকে ৩৩ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৮ এপ্রিল) পদ্মাসেতুর সুপারস্ট্রাকচার কাজে জড়িত প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিটি স্প্যানে ৭১টি করে রোড-ওয়ে স্ল্যাব (পাটাতন) বসাতে হয়। মাটি থেকে আট তলা সমান উচ্চতায় পদ্মাসেতুর এই পাটাতনগুলো একের পর এক বসছে। মাটি থেকে ক্রেনে স্ল্যাবগুলো তোলা হচ্ছে। এরপর ওপরে রাখা একটি ট্রাকে বসিয়ে স্ল্যাব নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে বসানো হবে সেখানে।

সেতুর একেকটি স্ল্যাব ৬ ফুট প্রস্থ, ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য আর ওজন ৫ হাজার দুইশ কেজি। রিমোট কন্ট্রোল ক্রেনে তুলে স্ল্যাবগুলো স্প্যানের ওপর তোলা হয়। আবার স্প্যানে বসানোর প্রক্রিয়াটিও রিমোট কন্ট্রোল। একেক স্ল্যাব বসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে জয়েন্ট দেওয়া হয়। দুই স্ল্যাবের মাঝ বরাবর জয়েন্টের কাজ করা হয় চীন থেকে আনা বিশেষ আঠা দিয়ে। ছাই আর কালোরঙা পাউডার মিলিয়ে বানানো হচ্ছে সেই বিশেষ আঠা, যা শেষ পর্যন্ত রূপ নিচ্ছে অফ হোয়াইট রঙে। কয়েকজন শ্রমিক হাতের সাহায্যে বানাচ্ছে সেই আঠা। আর স্ল্যাব বসানো হয়ে গেলে সুক্ষ্ম ফাঁকা অংশে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই আঠা। এই আঠা আগামী একশ বছর জয়েন্ট ধরে রাখবে- এমনটাই বলছে পদ্মাসেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ (এমবিইসি)।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, একদিনে সর্বোচ্চ ৯টি স্ল্যাব বসানো যায়। এখন স্ল্যাব বসাতে পদ্মাসেতুতে শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের দুটি দল কাজ করছে। একদল জাজিরা প্রান্তে আর অন্যদল মাওয়া প্রান্তে। বর্তমানে ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটির ওপর স্ল্যাব বসানো শুরু করেছে।

পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। দিনে ও রাতে আগের মতোই চলছে। করোনার কারণে কোনো কাজ চীনে বা দেশে থেমে থাকছে না। যেহেতু পদ্মাসেতুর কাজ লোকালয়ের বাইরে এজন্য জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে করা যাচ্ছে।

তিনি জানান, সেতুর কাজে আগের চেয়ে শ্রমিক কিছুটা কমেছে। তবে এতে বড় কোনো প্রভাব নেই। ২টি স্প্যানের কাজ চীনে শেষ করা আছে। এখন সে দুটির ব্লাস্টিং ও পেইন্টিং কাজ চলছে। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে চীন থেকে এ দুটি বাংলাদেশে রওনা দেবে। আর এখন স্প্যান ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে ১২টি স্প্যানের কাজ চলছে। এর মধ্যে ২টি প্রস্তুত আকারে রয়েছে। বাকিগুলোর কাজ ১৫টি সেমি রোবট মেশিনের সাহায্যে চলছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে তিন জেলাকে স্পর্শ করেছে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শুরু হয়ে মাঝখানে মাদারীপুর এবং শেষ প্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরায় গিয়ে মিলেছে। শুধু নদীর ওপর সেতুটি ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। আর উভয় দিকে সড়কপথের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় সেতুটি ৯ দশমিক ৩০ কিলোমিটার।

পদ্মাসেতু নিমাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং (এমবিইসি) জানায়, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ২০ ও ২১ নম্বর পিয়ারের ওপর একটি স্প্যান এবং মাসের শেষ দিকে ১৯ ও ২০ নম্বর খুঁটির ওপর ২৯তম স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে পদ্মাসেতুতে ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২৭টি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে এখন চার কিলোমিটারের চেয়ে একটু বেশি দীর্ঘ পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি রয়েছে ১৪টি স্প্যান বসানো। এ মাসে দুটি স্প্যান বসানো শেষে বাকি থাকবে ১২টি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ। ২০১৮ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে নতুন করে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। নতুন পরিকল্পনায় আগামী বছরের জুনে শেষ হবে সেতুর কাজ। তখন থেকেই সেতুতে সড়ক ও রেলপথ চালু করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সেতু কতৃপক্ষ।

এগিয়েছে করোনাকাল পদ্মাসেতু সড়কপথ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর