করোনায় মারা গেলে ফোন করুন, বাসায় পৌঁছাবে দাফন টিম
৮ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২৩
ঢাকা: এখন থেকে ঢাকায় করোনায় মৃতদের দাফনে অংশ নেবেন একদল আলেম। ফলে মরদেহ দাফন এখন থেকে ইসলামি নিয়ম মেনেই সম্পন্ন হবে। আলেমদের সেই টিম প্রস্তুত রয়েছে। এই নম্বরে ০১৯২০-৭৮১৭৯২ ফোন করলেই পৌঁছে যাবেন তারা।
দাফন টিমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। টিমটি আপাতত রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করবে। তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে টিমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হয়েছে।
গঠিত এ টিমের নেতৃত্বে রয়েছে মাওলানা গাজী ইয়াকুব। টিমের অন্য সদস্য হলেন এইচ এম লুৎফর রহমান, হিফজুর রহমান, সালমান বিন সাজিদ, নুরুননাবী নুর, কারী ওসামা বিন নিজাম ও মোহাম্মদ রাফী। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার আরও ৬০ থেকে ৭০ জন আলেম এ কাজে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পর্যায়ক্রমে তাদেরও দলে নেওয়া হবে।
বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালে টিমের প্রধান মাওলানা গাজী ইয়াকুব সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গাজী ইয়াকুব বলেন, করোনা আক্রান্তদের জানাজা ও দাফন সঠিক ইসলামি নিয়মে সম্পন্ন করতে এই টিম গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকায় এ কাজটি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী মারা গেলে তাদের জানাজা-দাফনের প্রয়োজন হলে আমাদের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে আমরা সেখানে পৌঁছে যাব। মরদেহের জানাজা ও দাফন কার্যক্রম আমরা সম্পন্ন করব। কারও কাফনের কাপড় দরকার হলেও আমরা তার ব্যবস্থা করব।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তিন-চার ঘণ্টা পর তার শরীরে আর জীবাণু থাকে না। এ জন্য কেউ কল করলে তিন-চার ঘণ্টা পর তার জানাজা-দাফনের ব্যবস্থা করব আমরা।’
মাওলানা ইয়াকুব আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুসলমানদের জানাজা ও দাফন নিয়ে সংকটের কথা শুনেছি। এ জন্য আমরা চাচ্ছি আমাদের দেশে যেন সে রকমটি না ঘটে। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক যেন একজন মুসলমানের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় সেজন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।’
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদের প্রথমে আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। আল মারকাজুল সংগঠনের কয়েকজন, মেডিকেল টিম ও পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম এতদিন মৃতদেহের জানাজা ও দাফন করে আসছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (ইমাম প্রশিক্ষণ বিভাগ) আনিস শিকদারের নেতৃত্বে আলেমদের নিয়ে এমন একটি টিম গঠন হওয়ায় অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বজন মারা গেছেন এমন এক পরিবারের সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘আক্ষেপ হয়. আমাদের বাবাকে দেখতেও পারলাম না, ছুঁতেও পারলাম না। ইসলামি নিয়মমতো সব হয়েছে কি না তাও জানি না। জানাজা ও দাফনের জন্য আলেমদের নিয়ে এ রকম একটি টিম হয়েছে শুনে ভালো লাগছে। আগে হলেও আমাদের বাবারও সৎকার হয়তো আরও ভালো হতো।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (ইমাম প্রশিক্ষণ বিভাগ) আনিস শিকদার বুধবার সকালে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় সীমিত আকারে মারকাজুল ইসলামের সঙ্গে আলেমরা কাজ শুরু করেছে। ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে গতকাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতর যদি পিপিইসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সরবরাহ করে তাহলে কাজ শুরু করতে পারবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের দরকার আছে।’
আনিস শিকার বলেন, ‘আমাদের টিমে কোনো নারী নেই। সেক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত কোনো নারী মারা গেলে সমস্যা হবে। দাফন টিমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ কোনো নারী কর্মীর ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।