Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ৯, ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন


৯ এপ্রিল ২০২০ ১০:৫৬

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় যখন ব্যস্ত বাংলাদেশ, ঠিক এমন পরিস্থিতিতেও থেমে নেই এডিস মশার আক্রমণ। বুধবার (৮ এপ্রিল) রাতের তথ্য বলছে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এই মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছয় জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের ৯ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী সংখ্যা প্রায় চার গুণ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানান।

ডা. আয়শা আক্তার বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৮০ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২১৭ জন ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ৬৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ডা. আয়েশা জানান, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন শহরে ৩০ জন, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন করে রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও খুলনা বিভাগে ৯ জন, বরিশাল বিভাগে তিন জন ও রাজশাহী বিভাগে একজন চিকিৎসা নিয়েছেন।

বর্তমানে যে ৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের তথ্য জানিয়ে ডা. আয়েশা বলেন, বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালে একজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সাত জন ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন আছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে।

বছরের প্রথম তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৭৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে এ বছর প্রথম তিন মাসে এমন রোগীর সংখ্যা ২৭১ জন, যা গত বছরের প্রায় চার গুণ।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এই রোগের ধরণ পাল্টেছে। এটি এখন আর কোনো নির্দিষ্ট মৌসুমের রোগ নেই। বছরজুড়েই থাকতে পারে ডেঙ্গু। একই কথা জানানো হয় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকেও। বাংলাদেশে সবাই যখন এ বছর কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন, তখন ডেঙ্গুর এমন হানাকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ডিন ও মেডিসিন অনুষদের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, এখনই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মানে হলো ডেঙ্গু এখন আর কোনো নির্দিষ্ট মৌসুমের রোগ নয়। সামনে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে বৃষ্টি শুরু হবে। তাই এখনই ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কর্মসূচি নিতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার করা যেতে পারে। তা না করলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সঙ্গে এটিও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

বিএসএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ডেঙ্গু রোগের ধরণ পাল্টেছে। এটি এখন আর নির্দিষ্ট কোনো মৌসুমের রোগ নেই। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা হয়তো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যেতে পারব। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হতে পারে।

ডা. কনক কান্তি বলেন, আমাদের হাসপাতালে ফিভার কর্নার চালু হয়েছে। সেখানে আমরা আলাদাভাবে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে আসা সবাইকে চিকিৎসাও দিচ্ছি। কিন্তু যদি মশা মারা কর্মসূচি জোরদার করা না যায়, তবে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, গত বছর ডেঙ্গু রোগীর পরিমাণ যখন বেশি ছিল তখন সিটি করপোরেশনগুলো যেভাবে জোরালোভাবে কাজ করছিল। এখন সে উদ্যোগে ভাটা দেখা দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে সবাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধেও কাজ করে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় আসলে মশক নিধন কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রমও ধরে রাখতে হবে।

জানতে চাইল আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে বলেন, বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে— এটা আমরা আগেই বলেছিলাম। আর এ কারণে মশা নিধনের অভিযানও বছরব্যাপী চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছি। কারণ, গত মৌসুমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী দুই ধরনের মশার অস্তিত্বই পাওয়া গেছে। আর তাই দেশব্যাপী মশা নিধনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই।

ডা. ফ্লোরা বলেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অনেকের মাঝেই দেখছি বর্তমানে জ্বর হলেই কোভিড-১৯ আতঙ্কে থাকছেন। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। আমি নিজেও এর মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি। তাই জ্বর হলেই কোভিড-১৯ মনে না করে যথাযথভাব রোগ নির্ণয় করতে হবে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা এ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।

প্রয়োজনে আইইডিসিআরের হটলাইন, ফেসবুক পেজ ও ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা।

করোনা ডেঙ্গু মহামারি হাসপাতালে ভর্তি

বিজ্ঞাপন

পদ প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৫২

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর