Sunday 01 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপিই চেয়ে আলোচনায় আসা সেই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চিকিৎসকের মৃত্যু


১০ এপ্রিল ২০২০ ১০:১৫ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২০ ১৩:১০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চিকিৎসকদের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) চেয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চিকিৎসক আব্দুল মাবুদ চৌধুরী (৫৩)। শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনিও। ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এই চিকিৎসক।

গার্ডিয়ান ও স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়, পূর্ব-লন্ডনের রমফোর্ড এলাকার হোমারটন হাসপাতালে কনসালট্যান্ট ইউরোলজিস্ট ছিলেন আব্দুল মাবুদ চৌধুরী। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর তাকে রমফোর্ডের কুইনস হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। আব্দুল মাবুদের জন্ম বাংলাদেশে। কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন না তিনি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ১৮ মার্চ করোনা প্রতিরোধে কর্মরত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরকারের কাছে পিপিই চেয়ে আলোচনায় আসেন আব্দুল মাবুদ। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বরাবর লেখা এক ফেসবুক পোস্টে তিনি চিকিৎসকদের পিপিই সরবরাহের আহ্বান জানান।

পোস্টে আব্দুল মাবুদ লিখেছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, দয়া করে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার অধীন স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যেকের জন্য জরুরিভিত্তিতে পিপিই নিশ্চিত করুন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের সরাসরি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে। ফলে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। কিন্তু তাদেরও বাকি সব মানুষের মতো পরিবার-পরিজন নিয়ে রোগমুক্তভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে।

চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিয়ে আব্দুল মাবুদের উৎকণ্ঠা যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়েছে ব্রিটেন। দেশটির অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আব্দুল মাবুদও সেই তালিকাতে সংযুক্ত হলেন।

ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এই চিকিৎসকের ১৮ বছর বয়সী ছেলে ইন্তিশার চৌধুরী স্কাই নিউজকে বলেন, আমার বাবা কেবল তার পরিবার নয়, তার সহকর্মী এবং অপরিচিত মানুষদের জন্যও ভাবতেন। তিনি আসলে সবার জন্য চিন্তা করতেন। সব মানুষের জন্য ছিল তার ভালোবাসা ও সহানুভূতি। তাই তিনি কারও ভুল ধরিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না।

বাবার চিকিৎসাধীন সময়ের কথা তুলে ধরে ইন্তিশার বলেন, আমি তার হাত ধরে বসে থেকেছি। তার পাশে বসে প্রার্থনা করেছি। তিনি খুব শান্ত ছিলেন। তিনি শুনতে পেয়েছেন কি না জানি না, তবে আমি তাকে বলেছি— আমি তোমায় ভালোবাসি, বাবা। তাকে হারানোর যে কষ্ট, আমি চাই না অন্য কেউ এই কষ্টের সম্মুখীন হোক।

ইন্তিশারের ছোট বোন ১১ বছর বয়সী ওয়ারিশ চৌধুরী বলছে, বাবাকে অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। বাবা আমার কাছে ছিলেন আশীর্বাদের মতো। কিন্তু খুব দ্রুতই চলে গেলেন তিনি।

ইন্তিশার ও ওয়ারিশ দু’জনেই জানিয়েছে, বাবার মতোই তারাও বড় হয়ে স্বাস্থ্যকর্মী হতে চান।

আব্দুল মাবুদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দ্য মুসলিম ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, এ খবরে আমরা গভীরভাবে ব্যথিত। তার পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা ও দোয়া রইলো।

আব্দুলকে একজন ‘বীর’ (হিরো) আখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা ও হ্যাকনির মেয়র ফিলিপ গ্ল্যানভিল। আব্দুলের মৃত্যুর পর এক টুইটে তিনি লিখেছেন, তার মৃত্যু নিশ্চয় করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও পিপিই নিয়ে সৃষ্ট চলমান সমস্যার কোনো পরিণতি ছিল না। তবু প্রশ্ন জাগে। তার মৃত্যু আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেবে, আমাদের নিরাপদ রাখতে কত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কতটা অবদান রাখছেন।

আব্দুল মাবুদ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত পিপিই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চিকিৎসক