ঘরবন্দি জীবনে রোগের ঝুঁকি, সুষম খাদ্যাভ্যাস-শরীরচর্চার পরামর্শ
১২ এপ্রিল ২০২০ ১০:০৮
ঢাকা: মুখরিত এই নগর জীবন ঘরবন্দি এখন। ব্যস্ত শহরকে ফাঁকা করে আপাতত চার দেয়ালে বন্দি থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অফিস আদালত বন্ধ থাকায় ২৪ ঘণ্টায় কাটছে ঘরে। এ অবস্থায় ঘরে শুয়ে বসে, টিভি দেখে অথবা মোবাইল স্ক্রিনে সময় কাটছে তাদের।
নেই কোন কায়িক শ্রম বা দীর্ঘ পথ হেটে শরীর চর্চারও কোনো সুযোগ। ঘরে মোবাইলে গেম খেলে, অনেকের মুভি দেখে সময় কাটছে। তবে যাদের অনলাইনে বসে অফিসের কাজ করা সম্ভব, তারা দিনের অনেকটা সময় অনলাইনে সময় ব্যয় করছেন।
এভাবে বেশির ভাগ সময় শুয়ে বসে থাকায় করোনা থেকে বাঁচলেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগ। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার জন্য বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে কি করোনা থেকে রক্ষা পেতে এসব রোগকে সঙ্গী করতে হবে?
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, আশঙ্কা থাকলেও সেই আশঙ্কা এড়ানোরও উপায় আছে। ঘরে বন্দি থাকলেও খেতে হবে সুষম খাবার। তার সঙ্গে ঘরে বসেই করতে হবে শরীরচর্চা। ঘরে বসেই যতটুকু সম্ভব শরীরটাকে সচল রাখতে হবে। তাহলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।
উম্মে কুলসুম আইরিন ও মারুফ আলম হাসান নব দম্পতি। গত ২০ মার্চ তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এরপর গত ২৩ মার্চ থেকে বাসাবো এলাকায় হোম কোয়ারেনটাইনে আছেন তারা। এখন পর্যন্ত একবারের জন্য বের হননি এই দম্পতি।
দীর্ঘদিন হোম কোয়ারেনটাইনে থেকে হাঁপিয়ে উঠছেন তারা। জানতে চাইলে উম্মে কুলসুম আইরিন জানান, বন্দি ঘরে থেকে জীবন অসহ্য হয়ে উঠছে। আর কিছু ভালো লাগছে না।
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনার ছিল বিয়ের পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে দূরে কোথাও যাব। ছুটি ঠিকই পেয়েছি। কিন্তু ঘরের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সময় কাটছে ঘরের মধ্যেই। কিছু তো করারও নাই। বাচঁতে হলে ঘরেই থাকতে হবে। তবে এই বন্দি ঘরেও ইন্টারনেট থাকায় কিছুটা ভালো সময় কাটছে। অফিসের কাজ যতটুকু করা যায়, তা ঘরে বসেই করছি। পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভিডিও কলে সংযুক্ত হচ্ছি।’
খাবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যা বাজার করে রেখেছিলাম, তা প্রায় ফুরিয়ে আসছে। ঘরে কিছু শুকনো খাবার রাখা আছে, আপাতত কিছু দিন তাই দিয়ে চলতে হবে।’
একই অবস্থায় দিন কাটছে রিনা আক্তারের পরিবারেও। ঘরে শুয়ে-বসে সময় কাটছে তাদের।
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন এভাবে শুয়ে-বসে থাকলে বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ, এমনকি ক্যানসারও। এর থেকে সুস্থ থাকতে সুষম খাদ্যাভ্যাস, ঘরোয়া শরীর চর্চার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হালিম খান বলেন, ‘না হাঁটার কারণে রক্তে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও ফিজিক্যাল ইন অ্যাক্টিভিটির জন্য উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিভারে চর্বি জমতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ফিজিক্যাল ইন-অ্যাকটিভিটির জন্য ক্যানসারও হতে পারে।’
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসায় বসে থেকে যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে, তা কিন্তু বার্ন হচ্ছে না। এর থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং রিচ ফুড থেকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। আর যাদের সুগারের সমস্যা আছে, তাদের খাবারের মাধ্যমে সেই সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
ফারজানা বলেন, ‘এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সবাইকে সচেতনার সঙ্গে খাবার গ্রহণ করতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। ঘরের মধ্যেও ছোট খাট কাজে অংশ নিতে হবে, যেন কিছুটা হলেও শরীরের চর্বি বার্ন হয়।’
মহামারি করোনার ভাইরাসের আতঙ্ক আর সরকারি নির্দেশনায় পাল্টে গেছে সারাদেশের দৃশ্য। গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শপিংমল, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস -আদালত। বিয়েশাদির অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে। মিনিটে মিনিটে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সর্বশেষ এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি মানুষের। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত ৪৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে, মারা গেছেন ৩০ জন।