কর্মহীন মোংলা বন্দরের হাজারও শ্রমিক, সাহায্যও অপ্রতুল
১৩ এপ্রিল ২০২০ ০৮:২২
মোংলা: করোনাভাইরাসের কারণে মোংলা বন্দরে জাহাজের যাওয়া-আসা কমে গেছে। যে কারণে জাহাজ ও জেটিতে পণ্য ওঠানামার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের সহায়তা দেয়নি বলে অভিযোগ। কিছু সংস্থা থেকে সামান্য সহায়তা মিললেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন তারা।
বন্দরের হারবার ও ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের আগে এখানে কর্মরত প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ভিত্তিতে জাহাজ ও জেটিতে পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। সে সময় মোংলা বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১৫/১৬টি জাহাজের অবস্থান থাকতো। সেই সঙ্গে বন্দর জেটিতেও কিছু পণ্য ওঠানামা করতো। কিন্তু করোনার কারণে এ বন্দরে এখন গড়ে প্রতিদিন ১০/১১টি জাহাজের অবস্থান থাকছে। পাশাপাশি কমে গেছে বন্দর জেটির অভ্যন্তরের অনেক কাজ।
মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সেন্টু জানান, জাহাজ আসার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ ভিত্তিতে কাজ করা এসব শ্রমিক-কর্মচারীর কাজ অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় কর্মহীন থাকা শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ড, নৌ বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু ত্রাণ ও সহযোগিতা শ্রমিকদের দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, বর্তমানে তারা খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যে সহায়তা ও ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ অবস্থায় আরও কতদিন চলতে হবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত সবাই। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় অনেকে বিকল্প কাজও করতে পারছেন না।
শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা জানান, ইতিমধ্যে তাদের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। ত্রাণ ও সহায়তা যা পেয়েছেন তা দিয়ে সামান্য কিছুদিন কোনমতে চললেও বাকি দিনগুলো কিভাবে সংসার চালাবেন, ঘর ভাড়া দেবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। অনেক পরিবারই এখন তিন বেলা ঠিকমতো খেতে পারছে না।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং এজেন্ট এইচ এম দুলাল করোনা প্রভাবের কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজ কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এ অবস্থায় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও কাজ কমে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই লোকসানের সম্মুখীন।’
বিভিন্ন সংস্থা থেকে কর্মহীন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষদের যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি বন্দর ব্যবহারকারী অন্যান্য স্টিভিডোরস ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সংকটকালীন এ সময়ে কর্মহীন শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি আর বেশি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শেখ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শ্রমিকদের মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ নয়, তারা স্টিভিডোরসদের (খালাসি ঠিকাদার) অধীনে কাজ করেন। ঠিকাদারই তাদের দেখভাল করে থাকেন। কাজকালীন সময়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রাথমিক উপকরণ দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা দুর্যোগে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে।’
শ্রমিককল্যাণ তহবিল থেকে শ্রমিকদের কোনো সহায়তা করা যায় কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’