Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসকদের মাস্কের দাম ১৪০০ টাকা ছাড়িয়েছে!


১৩ এপ্রিল ২০২০ ১০:২০

ঢাকা: এই করোনাকালে মাস্ক ছাড়া কেউ আছেন এমনটা এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মুখেই এখন প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি দেখা যাচ্ছে। বাজারেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে নানা ডিজাইনের মাস্ক। অনেকেই আবার বাজার থেকে কিনতে না পেরে নিজেরাই কাপড় দিয়ে মাস্ক বানিয়ে সেটা দিয়েই নাক-মুখ ঢাকছেন। তবে কিছুদিন আগেও এমনটি ছিল না। করোনার প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর ব্যবহার লক্ষ্যণীয় হারে বেড়ে যায়। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে চিকিৎসকরা তাদের প্রয়োজনীয় মাস্কটি পাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করায় চিকিৎসকদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই মাস্কে টান পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

দোকানে মাস্ক কিনতে গিয়ে না পেয়ে অনেকেই অনলাইনে ঢুঁ মারছেন। বলতে গেলে মাস্কের অনলাইন বাজার এখন চাঙ্গা। খুব ভালো মানের একটি ব্রান্ডের মাস্কের ছবি দিয়ে ১ হাজার ৪৫০ টাকা দাম হাঁকা হয়েছে ফেসবুকভিত্তিক একটি পেজে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন বেশকয়েকটি মেডিকল পণ্যের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, মাস্কের চাহিদা থেমে নেই। সাধারণ মানুষজন চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত মাস্ক কিনে নিচ্ছেন। আর এটা শুরু হয়েছে আরও একমাস আগে।

বিজ্ঞাপন

গুলশানের বেসরকারি একটি মেডিকেলের একজন চিকিৎসক ফেসবুকের একটি পেজ থেকে এন ৯৫ মাস্ক কেনার চেষ্টা করেন। মিস কান্টিক ফ্রম কেএল miss cantik from kl নামের এই ফেসবুক পেজভিত্তিক শপ থ্রি-এম ব্রান্ডের এন৯৫ মাস্কের দাম চেয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ গত সপ্তাহে এই মাস্ক তিনি ৪০০ টাকায় কিনেছেন বলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান।

এরকম দাম বাড়ানোর বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে ফেসবুক পেজের ওই শপ জবাবে বলেছে, ‘আমাদের মাস্কটি আসল থ্রি-এমএন ৯৫। এটি চীন থেকে আমদানি করা এবং লিমিটেড স্টক।‘ এ নিয়ে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দিতে গিয়ে তাদের নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন বলে জানান বেসরকারি মেডেকেলের ওই আবাসিক চিকিৎসক।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান সারাবাংলাকে জানান, তারা নিয়মিত কল পাচ্ছেন। তাদের নম্বর পরিবর্তন হয়নি। আর এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলছে। বেশ কিছুদিন মাস্কসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদির বাড়তি মূল্যের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে, যা এখনও চলমান রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ঘেঁটে একইভাবে কিছু অনলাইন শপ ও মৌসুমী বিক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে, যারা বেশি দামে সার্জিকাল মাস্ক বিক্রি করছেন। নির্দিষ্ট এলাকায় বুস্ট করে স্টক লিমিটেড জানিয়ে ক্রেতাদের অফার দিচ্ছেন। চীন থেকে মাস্ক ও মেডিকেল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত একজন ব্যবসায়ী জানান, আসল থ্রি-এম ৯৫ মাস্ক বাংলাদেশে শেষ হয়ে গেছে। কারও কাছে অল্প কিছু থাকলে থাকতে পারে। এটি আমেরিকান ব্রান্ড এবং চীনের কারখানায় তৈরি হয়। এখন আমেরিকা বাইরের কাউকে এটি দিচ্ছে না। তাই চাইলেও কেউ এটি আমদানি করতে পারবে না। এ কারণে যাদের কাছে ছিল তারা এখন বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নিচ্ছে।

ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশে মাস্ক ব্যবহার বাড়তে থাকে। তখন চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। হাঁচি-কাশিতে ছড়ানো ছোঁয়াচে এ রোগটি থেকে সুরক্ষা পেতে দেশের মানুষ ওষুধের দোকানগুলোতে মাস্ক কিনতে ভিড় জমায়। ফলে তখনই বেড়ে যায় মাস্কের দাম। পাশাপাশি দেখা দেয় সংকটও।

সম্প্রতি আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা দল বলেছে, লকডাউন ও অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি জরুরি কাজে বাইরে চলাফেরার সময় সবাই মাস্ক ব্যবহার করলে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই ১০ শতাংশ হারে কমবে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, সবার মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। কেবলমাত্র যারা অসুস্থ এবং চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টরা পড়বেন। বিশ্বজুড়ে মাস্ক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এমন বক্তব্য দেন বলে অভিমত অনেকের।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পরামর্শের সঙ্গে একমত। তবে সরকারিভাবে এখন সবার মাস্ক পড়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান অধিদফতরের এক কর্মকর্তা।

সম্প্রতি চিকিৎসকদের মাস্ক সংকট যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা গেছে। দেশটির সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) থেকে পরিষ্কার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সাধারণ নাগরিকেরা যেন কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করে।

এন-৯৫ মাস্ক কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর