কোভিড-১৯ চিকিৎসা: ৪ বিভাগে নেই কোনো আইসিইউ
১৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৪
ঢাকা: এখন পর্যন্ত দেশে আট শতাধিক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত কয়েকদিনের তথ্য বলছে, এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতেই করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের চিহ্নিত করা না গেলে তাদের চিকিৎসা নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। কারণ দ্রুত কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত না করতে পারলে তখন তাদের চিকিৎসায় প্রয়োজন হবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ। সেক্ষেত্রেও সাধারণ আইসিইউ হলে চলবে না, প্রয়োজন হবে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জামসহ পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ। অথচ কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় সারাদেশে পর্যাপ্ত আইসিইউয়ের অভাব রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের আট বিভাগের মধ্যে চার বিভাগে নেই একটিও আইসিইউ।
সারাবাংলা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা উপযোগী সারাদেশে কমবেশি ১১২টি আইসিইউ ইউনিট, ৪০টি ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং সাত হাজার ৬৯৩টি আইসোলেশন ইউনিট আছে। তবে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এক ইউনিটেরও আইসিইউ সেবার সুযোগও নেই। অন্যদিকে ঢাকা শহরের বাইরে কোথাও নেই ডায়ালাইসিস সেবা ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন- করোনা চিকিৎসায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল?
সারাদেশে যে সাত হাজার ৬৯৩টি আইসোলেশন ইউনিটের কথা বলা হচ্ছে, এর মধ্যে ঢাকা শহরে আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে ১৫৫০টি এবং ঢাকা শহরের বাইরে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৬৭৯টি। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ৮৪৮টি, ময়মনসিংহে এক হাজার ৩০টি, বরিশালে ৫৪৫টি, সিলেটে ৩৪৬টি, রাজশাহীতে ১২শটি, খুলনায় ৬৯০টি ও রংপুরে ৭৮৭টি আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে।
অন্যদিকে ১১২টি আইসিইউ ইউনিটের মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ৭৯টি। এর বাইরে ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬টি, সিলেট বিভাগে দুইটি ও খুলনা বিভাগে পাঁচটি আইসিইউ ইউনিট রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের প্রস্তুতি আছে বলে প্রথম থেকেই আমাদের বিভ্রান্ত করছে। আমাদের এখানে যখন সংক্রমণ শুরু হলো এবং মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে থাকলো, তখনো তারা আমাদের বিভ্রান্ত করছে। এখন ১১২টি আইসিইউ প্রস্তুত থাকার কথা বলা হলেও সেগুলো আদৌ প্রস্তুত কি না, তা ভাবনার বিষয়।’
আইসিইউ সংকট কাটাতে দুইটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আসলে করণীয় দুইটি। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবমিলিয়ে মোট এক হাজার ১৬৯টি আইসিইউ ইউনিট আছে। আপৎকালীন হিসেবে এগুলোকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কোভিড-১৯-এর জন্য বরাদ্দ করতে হবে। আবার সাধারণ আইসিইউ রোগী ও করোনায় আক্রান্ত আইসিইউ রোগীকে একসঙ্গে রাখা যাবে না। এজন্য হাসপাতালগুলোও আলাদা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, আমাদের করোনা উপযোগী আইসিইউয়ের ব্যবস্থা এখনই করতে হবে। কেননা দেশে আইসিইউর সংকট আছে। শুধুমাত্র কোভিড-১৯-এর জন্য আমাদের দুই থেকে তিন হাজার আইসিইউ জোগাড় করে ফেলা দরকার।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আইসিইউর ঘাটতি রাতারাতি বদলানো যাবে না। এ ধরনের উচ্চমানের বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল বিষয়। সামনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। কিন্তু গুরুতর রোগীদেরও হয়তো আইসিইউ সেবা দেওয়া যাবে না। আর তাই বর্তমান জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় অবকাঠামো দিক থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের এখন প্রতিরোধের ওপরই জোর দিতে হবে।
বেনজির আহমেদ বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আর পরিকল্পনায় অনেক ঘাটতি আছে। এখানে সমন্বয়হীনতা আছে যেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বক্তব্যেও অসামঞ্জস্যতা থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ১১২টি আইসিইউয়ের মধ্যে ৭০টি বর্তমানে প্রস্তুত। বাকিগুলোর অবস্থা এই সপ্তাহেই আমরা জানাতে পারব। একইসঙ্গে চট্টগ্রামে ১০টি আইসিইউ স্থাপনের প্রস্তুতি শেষের পথে। খুব শিগগিরই আমরা সেগুলো চালু করতে পারব। সিলেটে আইসিইউয়ের জন্য খুব দ্রুতই জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি, এই সপ্তাহের মধ্যেই এগুলো চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়ে যাবে।
আইসিইউ করোনাভাইরাস করোনাভাইরাসের চিকিৎসা করোনার চিকিৎসা কোভিড-১৯ কোভিড-১৯ চিকিৎসা