করোনায় শ্রীমঙ্গলে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ভ্রাম্যমাণ ‘শপ-২০’
১৪ এপ্রিল ২০২০ ১২:৫৭
মৌলভীবাজার: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বের মতো স্থবিরতা নেমে এসেছে বাংলাদেশে। অন্যান্য দেশের মতো এখানেও প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও আবার লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪) বিকেল ৫টা থেকে মৌলভীবাজারকেও লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ফলে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষদের চিন্তা লাঘব করতেই শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ব্যতিক্রমি এক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ দোকান ‘শপ-২০’ চালু করা হয়েছে। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
হটলাইন নম্বরে (০১৭০০৭১৭১৩৮) ফোন করলেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ এই দোকান। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষ কিনতে পারছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। চাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, ডাল, প্রত্যেকটি পণ্যের বাজারমূল্য যাই হোক না কেন, এখান থেকে প্রতিটি পণ্য কেজিপ্রতি ২০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বয়স্ক ও শিশু খাদ্যের জন্য স্থানীয় খামার থেকে কেনা গরুর দুধ বিক্রির কথাও ভাবছেন উদ্যোক্তারা।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য অত্যন্ত সুলভে কিনতে পেরে খুশি সোলেমান আহমেদ মানিক নামে এক ক্রেতা। তিনি জানান, এই করোনা দুর্যোগে এরকম উদ্যোগ সত্যিই প্রশসংনীয়। এটা অব্যাহত রাখতে পারলে ঘরবন্দি মানুষগুলো অন্তত খাবার কেনা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকবে না।
এ কর্মসূচির সমন্বয়কারী তাইজুল ইসলাম জাভেদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, গত দুদিন উপজেলা শহর থেকে দূরবর্তী নোয়াগাঁও, কুঞ্জবন, কুমিল্লাপাড়া, বুদ্ধপাড়া, লামুয়া, ভৈরবগঞ্জ, মতিগঞ্জ, সরকার, ভূনবীরসহ বেশকিছু জায়গায় ফোন কলের ভিত্তিতে ৪১০টি পরিবারের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। ঘরে বসে স্বল্পমূল্যে বাজার করতে পেরে খুব খুশি এলাকার মানুষ।
জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল সরকারি কর্মকর্তাদের একদিনের বেতন ও অনুদান এবং লেডিস ক্লাবের অনুদানে এ ‘শপ-২০’ কার্যক্রমের ফান্ডটি গঠিত হয়। স্থানীয় করোনা প্রতিরোধ কমিটির পরিচালনায় এ কার্যক্রম দুদিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তবে অনুদানের বাজেট ও বিনিয়োগকৃত অর্থ ফুরিয়ে গেলে দোকানটি কীভাবে চালানো হবে এ নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের জনগণের এ অবস্থায় এটি খুবই কার্যকরী উদ্যোগ। জনহিতকর এ উদ্যোগটি যাতে মাঝপথে থেমে না যায় সে ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের এখন থেকেই করণীয় সম্পর্কে ভাবতে হবে। এটি চালানো গেলে এলাকার জনগণের দুর্দশা লাঘব হবে।’ এক্ষেত্রে বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
ভ্রাম্যমাণ বিপণী ‘শপ-২০’র উদ্যোগ গ্রহণকারী শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই উদ্যোগটি সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমি মনে করি। সেইসঙ্গে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। এটা চালু রাখা দরকার। এজন্য আমরা একটা ফান্ড গঠন করতে যাচ্ছি। অনেকেই উৎসাহী হচ্ছেন এটিতে অনুদান দিতে। স্বেচ্ছায় পাওয়া অনুদানের ভিত্তিতে আমরা এটি চালু রাখতে চাই।’
ভ্রাম্যমাণ দোকানটি চালু রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।