অপেক্ষার ১৯ বছর…, নিষ্পত্তি হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলা
১৪ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৪৬
ঢাকা: রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ২০০১ সালে সংগঠিত বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরফ আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৪ সালে হত্যা মামলাটির রায় হলেও ১৯ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার। এ কারণে হত্যা মামলার রায় কার্যকর সম্ভব হচ্ছে না। দুটি মামলাই যদি নিষ্পত্তি হয়ে যেত তাহলে দ্রুত রায় কার্যকর করা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
হত্যা মামলায় রায়ের সাত বছরেও হাইকোর্টে আসামি পক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষ হয়নি। কখন শেষ হবে তাও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। মামলাটিতে আটজনের ফাঁসি ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার তৎকালীন বিচারিক আদালত। অপরদিকে বিস্ফোরক মামলাটি সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়া বিচার শেষ হয়নি। তবে অতি দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি শহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স শুনানির শেষ পর্যায়ে আসার পর আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়। এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে মামলাটি পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে। ওই বেঞ্চেও মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বর্তমানে মামলাটি অন্য বেঞ্চে নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে।
বর্তমানে বিস্ফোরফ আইনের মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। চলতি বছরের ১২ মার্চ মামলাটি সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তা অসুস্থ থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। এজন্য আদালত ১২ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। করোনাভাইরাসের কারণে ১২ এপ্রিল আদালত ছুটিতে থাকায় কার্যক্রম হয়নি। সাধারণ ছুটি শেষ হলে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করবেন আদালত।
বিস্ফোরক আইনের মামলা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে জানান, ‘সাক্ষীদের অবহেলায় কারণে মূলত এ মামলার বিচার কাজ শেষ হচ্ছিল না। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আশা করছি খুব দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হবে।’
দ্রুত বিচার এক নম্বর ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। সাক্ষ্যগ্রহণও প্রায় শেষের দিকে। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হবে। আশা করছি, খুব দ্রুত মামলাটির রায় ঘোষণা হবে।’
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ বলা হয়েছে, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় আরও একজন।
ওই ঘটনায় রাজধানীর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু করতে দেরি হয়।
২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার ৮ম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ মামলা দুটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বিচারের জন্য মামলা দুটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ বিচারের জন্য পাঠানো হয়। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনও বিচারিক আদালতেই আছে।