১ বছরে অগ্রগতি হয়নি রমনা বটমূলে বোমা হামলার আপিল শুনানির
১৪ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪২
ঢাকা: রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার বহুল আলোচিত মামলার আপিল শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি হলেও গত এক বছর ধরে একই জায়গায় পড়ে আছে মামলাটি। এ নিয়ে গত ৬ বছরেও শেষ হয়নি এ মামলার আপিল শুনানি।
কয়েক দফা কোর্ট পরিবর্তন এবং এক পর্যায়ে মামলাটি সাক্ষ্য প্রমাণ শুনানি শেষে মামলাটি এক সময় যুক্তিতর্কের পর্যায়ে গেলেও শেষ পরিণতি হয়নি।
কোর্টের এখতিয়ার পরিবর্তনসহ কয়েক দফা পরিবর্তন হওয়ায় মামলাটি শেষ হতে সময় লাগছে বলে মনে করছেন মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। করোনার ছুটির পরে কোর্ট খুললে মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল।
রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার একটি একধাপ পেরিয়ে হাইকোর্টে গেলেও আরেকটি এখনো বিচারিক আদালতে বিচারাধীন। সাক্ষীর অভাবে দেড়যুগের বেশি সময়েও শেষ হয়নি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা।
এদিকে হাইকোর্টে হত্যার মামলার আপিল শুনানির জন্য বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
তিনি বলেন, মামলাটি কার্যতালিকাভুক্ত আছে। শুনানির অপেক্ষায় আছে। অচিরেই শুনানি হতে পারে। গত একবছরে এ মামলার অন্য কোনো বেঞ্চে শুনানি হয়েছে কি না তা জানা নেই বলেও জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, এ মামলাটি শুনানির জন্য গত বছর বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ছিল। এরপর ওই বেঞ্চটি রদবদল হওয়ায় মামলাটি শুনানির জন্য আর কোনো বেঞ্চের তালিকায় দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, করোনার পরে কোর্ট ছুটিতে আছে। ছুটি শেষে কোর্ট খুললে মামলাটি শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু তারপর আর আগায়নি মামলাটি। পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। এরপর দীর্ঘ সময় পর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পৃথক আরেকটি বেঞ্চে দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।
মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন।
উল্লেখ্য এর মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের পৃথক একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে শেষ হয়।