Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিপিই পাননি, অভিযোগ কিডনি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের


১৫ এপ্রিল ২০২০ ০৮:১৬

ঢাকা: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত বিশেষায়িত এই হাসপাতালে গত ৪ এপ্রিল এই হাসপাতালের একজন রোগী কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস পজিটিভ হন। তাকে চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলেও সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে অবশ্য কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে ফের তাকে হাসপাতালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি তথা কিডনি হাসপাতালের চার চিকিৎসক, ছয় নার্স, তিন ওয়ার্ড বয় ও তিন ক্লিনারকে কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়। হাসপাতালের বাকি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও রয়েছেন আতঙ্কে। এরই মধ্যে বিশেষায়িত এই হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের অভিযোগ, তারা সরকারের পক্ষ থেকে পিপিই পাননি।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের একাধিক সূত্র বলছেন, কিডনি হাসপাতালের রোগীদের একটি বড় অংশই ডায়ালাইসিসের রোগী। এ ধরনের জটিলতায় ভুগছে— এমন কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ডায়ালাইসিসের রোগী যারা ছিলেন, তাদেরও এখন পাঠানো হয়েছে এই হাসপাতালে। ফলে একদিকে রোগীর চাপ বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

চিকিৎসকরাই বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় অনেক রোগীই নিজের উপসর্গ গোপন করছেন। এ ধরনের কারও থেকে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। অথচ এমন পরিস্থিতিতে কিডনি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পাননি সরকারি পিপিই। সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে তাদের কিছু পিপিই দেওয়া হলেও সেগুলো ডিসপোজেবল। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এখানকার চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা আরও বলছেন, এই হাসপাতাল থেকেই একজন রোগীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু এখানে ডায়ালাইসিসে সরাসরি যুক্ত চিকিৎসকদেরও পিপিই দেওয়া হয়নি। সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে দেওয়া পিপিইগুলোর ব্যবহার আবার চিকিৎসকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের তা ব্যবহারের সুযোগ নেই। চিকিৎসকদের মধ্যেও কারা পিপিই পাচ্ছেন, সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। আর সরকারি পিপিই’র জন্য রিকুইজিশন দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়টি চিকিৎসকরা জানেন না বলে জানান।

হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ডায়ালাইসিসের রোগীসহ বহির্বিভাগে যেসব রোগী আসছেন, তাদের সরাসরি সংস্পর্শে যেতে হচ্ছে তাদের। এসব রোগীর কেউ করোনায় আক্রান্ত থাকলে তার থেকে সংক্রমণ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে এই হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেবাও হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় এই হাসপাতালেও রোগীদের প্রাথমিক স্ক্রিনিং করে কারও মধ্যে উপসর্গ থাকলে তাকে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, পিপিই সংগ্রহ বা বিতরণ নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের কোনো উদ্যোগ তারা দেখেননি। এছাড়া চিকিৎসকদের আনা-নেওয়ার বিষয়েও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি হাসপাতালের পক্ষ থেকে।

হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন সারাবাংলার কাছে। তার দাবি, অনাগত বেশি বিপদের দিনের জন্য তিনি সরকারি পিপিই সংরক্ষণ করছেন। সাজেদা ফাউন্ডেশনের দেওয়া পিপিই শেষ হলে সরকারি পিপিইগুলো বিতরণ করবেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছ থেকে পিপিই পেয়েছেন দাবি করে ডা. নুরুল হুদা লেনিন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা কিন্তু জানি না এই বিপদ কতদিন থাকবে। তাই পরিকল্পনা করে পিপিই বিতরণ করা হচ্ছে। এখন সবাইকে পিপিই দেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন যদি পিপিই দিতে না পারি?

তিনি বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা পিপিই দিচ্ছি। যারা ফাস্ট কন্টাক্টে যাচ্ছেন, তাদের আমরা পিপিই দিচ্ছি। ক্যাজুয়াল ওয়ার্ড বা ওয়ান স্টপ সেন্টারে আমরা পিপিই দিচ্ছি। কিন্তু ধরুন যারা ইউরোলজিতে আছেন, সেখানে কিছুটা কম দিচ্ছি। এভাবেই আমি চালিয়ে নিচ্ছি। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আমি সব চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করব।

হাসপাতালে চিকিৎসকদের যাতায়াত সুবিধা না দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন পরিচালক। তিনি বলেন, আমার এখানে ডরমিরেটরি আছে। সেখানে যারা থাকতে পারবেন, তারা থাকছেস। নার্স ও স্টাফদের আলাদা ডরমিরেটরি আছে। এসব স্থানেই বেশিরভাগ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখা হচ্ছে। বাকি যারা আছেন, তাদের অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়িতে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। সরকারের তো এত গাড়ি নেই। কী করবেন বলেন!

করোনাভাইরাস কিডনি হাসপাতাল চিকিৎসক পিপিই

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর