চাল চোরদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত
১৫ এপ্রিল ২০২০ ১২:৫৬
ঢাকা: মহামারি করোনায় দিন দিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। করোনার প্রভাবে দরিদ্র আর অসহায় মানুষ যখন খাবারের জন্য হা হা করছে, তখন কতিপয় মানুষ ত্রাণের চাল চুরিতে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। দেশের এই পরিস্থিতিতে যারা চাল চুরি করছে, তাদের আইনের আওতায় এনে ঘৃণ্য এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের কথা বলছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা।
দেশের এই পরিস্থিতিতে চাল চুরির অপরাধকে অনেকাংশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও অ্যাখ্যায়িত করেছেন অনেকে। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪২০, ৪০৬, ৪০৩ ও ৩৭৯ ধারায় মামলা হতে পারে জানিয়ে আইনজীবীরা বলেন, যেহেতু আদালত আপাতত বন্ধ রয়েছে, সেক্ষেত্রে দেশের এই পরিস্থিতে এ ধরনের অপরাধ রোধে মোবাইল কোর্টের ১৫ ধারা অনুযায়ী তফসলি সংশোধন করে মোবাইল কোর্টকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে।
চাল চোরদের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে এ ধরনের কাজ অবশ্যই দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। একজন ইউপি সদস্য বা চেয়ারম্যান তারা পাবলিক সার্ভেন্ট। তাদের এভাবে ত্রাণ আত্নসাৎ অব্যশই দুর্নীতি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের এই পরিস্থিতিতে দেশ, জাতি তথা ১৭ কোটি মানুষ যেখানে একসঙ্গে যুদ্ধ করছে, সেখানে কিছু লোক এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করছে। এটাকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা উচিত। দুদক চেয়ারম্যান এ বিষয়ে অ্যাকশন নিতে এরই মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালন করে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে।’
দুদকের এই আইনজীবী জানান, চাল চুরির অপরাধ প্রমাণিত হলে দুদক আইনের ৫ (২) ধারায় ৭ বছর সাজা হবে। আর ৪২০ ধারায় মামলা হলে তার সর্বোচ্চ সাজা হবে ৭ বছর। তবে এ ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট সর্বোচ্চ দুই বছর সাজা দিতে পারবে।
দেশের এই অবস্থায় চাল চুরির ঘটনাকে সব থেকে নিকৃষ্ট কাজ আখ্যায়িত করে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এটা সব থেকে অমানবিক কাজ। এ ধরনের চোরদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। দেশের এই পরিস্থিতিতে জনগণের অধিকার হরণ করে চাল আত্নসাৎ করছে। দুদক আইন ছাড়াও পেনাল কোডের ৪২০ ধারায় চোরদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
চাল চোরদের হাত থেকে জনগণের অধিকার রক্ষায় সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করতে গত ১১ এপ্রিল সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাবিশ্ব এখন করোনা মহামারির আতঙ্ক। এই মহামারি থেকে বাঁচতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন হচ্ছে একটার পর একটা জেলা। এই অবস্থায় দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ত্রাণ সহায়তা ও দশ টাকা কেজিতে চাল কেনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও এক শ্রেণির অসাধু জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী হাত দিয়েছে। কেউ চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করছেন, কেউ আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা খাচ্ছেন।
দেশের এই অবস্থায় যারা চাল চুরি ও আত্মসাৎ করছে তারা অনেকাংশে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছেন বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী। তিনি একে রাষ্ট্রের স্বার্থ পরিপন্থী বলে অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হতে পারে বলেও জানান।
এর আগে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান সরকারকে পাঠানো এক নোটিশে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এই মূহূর্তে আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার লজ্জায় মুখ ফুটে সাহায্য চাইতে পারছে না। এসব পরিবারে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন পত্র- পত্রিকা, টিভি মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এ সংক্রান্ত নানান খবর প্রকাশ পেয়েছে। এই অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করে তাদের কাছে খাদ্য এবং ওষুধ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।’ এজন্য সেনাবাহিনীর ওপর দায়িত্ব অর্পণ করতে নোটিশে দাবি জানান তিনি।