Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত, চালু হটলাইনও


১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৪

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের আশঙ্কায় অনেকেই অভিযোগ করছেন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার বিষয়ে। তবে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে জরুরি বিভাগ ও হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগে আগের মতোই কার্যক্রম চলছে। তবে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়িয়ে চলার জন্য সতর্কতা হিসেবে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৫ এপ্রিল) রাজধানীয় শের-ই বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে এমন অবস্থায় দেখা যায় সরেজমিনে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কিভাবে চলছে সেটি জানার জন্য কথা হয় উপমহাদেশের সবচাইতে কম বয়সী কার্ডিয়াক সার্জন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এনআইসিভিডি ডা. আশরাফুল হক সিয়ামের সঙ্গে। যিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বুকের হাড় না কেটে সফলভাবে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। একই সঙ্গে কথা হয় বর্তমান অবস্থায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আমাদের চ্যালেঞ্জ নিয়েও।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কিভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য এসে ফেরত যায়নি বা চিকিৎসা পায়নি এমনটা ঘটেনি। কেউ এমনটি বলতেও পারবে না। তবে হ্যাঁ বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি বিশেষ করে হাসপাতালের বহির্বিভাগে। কার্ডিওলজি, পেডিয়াট্রিক বহির্বিভাগ এগুলো আমাদের খোলা। তবে হ্যাঁ এ সময় যেহেতু রোগীর সংখ্যা কম তাই আমরা অনেক কিছুই পরিকল্পনার সঙ্গে সীমিত আকারে নিয়ে এসেছি। ইমার্জেন্সিতে আমরা মূল ফোকাস করছি। সেখানে সকলে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পড়ে সবাই কাজ করছে। কারণ যদি কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি অজান্তেই চলে আসে তবে তাকে কিন্তু দেখে বোঝা যাবে না। এইক্ষেত্রে আমাদের ইমার্জেন্সিতে সবাইকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে তারা শুরুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আমাদের পাশেই শিশু হাসপাতালে বর্তমানে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালু হয়েছে। যেহেতু আমাদের পাশেই এই হাসপাতাল তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদি কোনো সাসপেক্টেড পেশেন্ট এসে থাকে সেক্ষেত্রে আমরা এখান থেকে নমুনা পাঠাবো শিশু হাসপাতালে। ওদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তাও চলছে। সেখানে পরীক্ষার ফলাফল পেতে হয়তো বা সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। আর তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে যাবো যে সেই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কি না। যদি করোনা না হয় তবে আমরা এক ধরণের চিকিৎসা করবো। আর যদি করোনা হয় তবে যেখানে রেফার করার সেখানে রেফার করবো। এটা আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: হৃদরোগের সঙ্গে কী কোভিড-১৯ এর কোনো মিল আছে?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: করোনার সঙ্গে কার্ডিয়াক অনেক ইস্যুই মিলে যায়। যেমন শ্বাসকষ্ট, সিওপিডির কারণে দেখা যায় ফুসফুসের অবস্থা খারাপ হয় যার কারণে দেখা যায় আমরা এক্সরে করি। এই ক্ষেত্রেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করার একটা বিষয় থাকে। অর্থাৎ রোগী কী সিওপিডি আক্রান্ত নাকি রেসপিরেটরি কোনো সমস্যায় আক্রান্ত নাকি করোনা আক্রান্ত এটা ডায়াগনসিস করার একটা বিষয় থাকে। আবার দেখা যায় একটা রিপোর্ট দেখেই করোনা নেগেটিভ বলে দেওয়ারও সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়, তৃতীয় নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যদি কাউকে দেখে ক্লিনিকালি মনে হয় সাসপেক্টেড কেইস তবে হয়তো বা তাকে আইসোলেশনে রাখলাম। সেক্ষেত্রে দুইটা বা তিনটা টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হয় যা আন্তর্জাতিকভাবেও করা হয়। আমাদের দেশেও কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) কিন্তু একটা পজেটিভ হলে সেটাকে আক্রান্ত বলছে না। এক্ষেত্রে তারাও আন্তর্জাতিক মান ফলো করে যাচ্ছে।

সারাবাংলা: বর্তমান সময়ে বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যা বেড়ে গেছে, আবার দেখা যাচ্ছে সিওপিডি সংক্রমণের হারও বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে এটা কি করোনা সম্পর্কিত কিছু হতে পারে?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: এটা আসলে হয়তো বা করোনার কারণেই এবার সবার সামনে আসছে। কিন্তু এই সংখ্যা আসলে কতটা সিগনিফিকেন্ট তা জানতে হলে আগের ডাটাও দেখতে হবে। যেহেতু আমরা করোনা নিয়ে সজাগ তাই এটা নিয়ে এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে। আমাদের আগে যে সকল কার্ডিয়াক সমস্যা আসে বা আগেও এসেছে তার অধিকাংশই কিন্তু শ্বাসকষ্ট নিয়েই আসতো। আমরা তখন তাদের সেভাবে চিকিৎসা করে যেতাম। যেহেতু তখন করোনা ছিল না তাই আমাদের চিকিতসাও একদিকে গেছে। এমনকি ডায়াগনসিস করার ক্ষেত্রেও।

সারাবাংলা: শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ মানেই কী তবে কোভিড-১৯?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: কোভিড-১৯ আসার কারণে আমরা বর্তমানে এগুলিকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা করছি। এ কারণে কোনটা রেসপিরেটরি সমস্যার রোগী, কোনটা সিওপিডি রোগী বা কোনটা কোভিড-১৯ রোগী তা আমরা আলাদা করছি। কাঁশি, সর্দি, জ্বর মানেই কিন্তু কোভিড-১৯ না। ডেঙ্গুও কিন্তু হতে পারে। কোভিড-১৯ না থাকলে তখন হয়তো বা আমরা ডেঙ্গুর চিকিৎসার কথা ভাবতাম সেক্ষেত্রে। যেমনটা গতবছরও হয়েছে। কেনো ভাবছি? কারণ সারা পৃথিবী কিন্তু কোভিড-১৯ আক্রান্ত। সবার ভাবনাও সেদিকে যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, কাঁশি এগুলো কোভিড-১৯ এর লক্ষণ কিন্তু এগুলো থাকা মানেই কেউ সেই রোগে আক্রান্ত বিষয়টা তাও না। শ্বাসকষ্ট আপনার রেসপিরেটরি সমস্যার কারণেও হতে পারে আবার হার্ট ফেইলিউওরেও হতে পারে, সিওপিডির কারণেও হতে পারে।

সারাবাংলা: এক্ষেত্রে আসলে শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ, কোভিড-১৯ বা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা পড়তে পারি?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: এক্ষেত্রে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তরুণ চিকিৎসকদের। যারা সরাসরি রোগীকে চিকিৎসাদানের সঙ্গে জড়িত। যারা গাইডলাইন তৈরি করছে, কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে সে বিষয়ে ব্যবস্থাপনার জন্যে যারা মন্ত্রণালয়ে কাজ করছে বা স্বাস্থ্য অধিদফতরে বসে নির্দেশনা তৈরি করছেন তাদের চাইতেও মাঠের আসল চিত্র বেশি ফুটে উঠে তরুণ চিকিৎসক, এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও কিছু ক্ষেত্রে। কারণ তরুণ চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন ও গণমাধ্যমকর্মীরা মাঠে ঘুরে সরাসরি দেখছেন সেই ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে একজন তরুণ চিকিৎসকের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। সেটা কিভাবে? ধরুন আমার এখানে একজন রোগী আসলো যার মধ্যে সাসপেক্ট করার মতো কিছু সিম্পটম আছে। হয়তোবা তার কার্ডিয়াক কোনো সমস্যা নতুবা কোভিড-১৯। সেক্ষেত্রে আমার কী করতে হবে? আগে ডায়াগনসিস করতে হবে। ডায়াগনসিস করার জন্য কী করতে হবে? অবশ্যই টেস্ট করতে হবে। এই টেস্টটাকেই অ্যাভেইলেবল করতে হবে। একই সঙ্গে জ্বর, সর্দি, কাঁশি এগুলোর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বা অবজারেভেশন করার জন্য একটা আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড করতে হবে। যখন আমি মনে করবো যে এই রোগীটা কোভিড-১৯ সাসপেক্ট করার মতো তখন আমি তাকে আইসোলেশনের বেডে নিয়ে রাখবো। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তার নমুনা পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়ে আমাকে নিশ্চিত করে দিতে হবে যে এটা কোভিড-১৯ নাকি অন্য কোনো রোগ। সেক্ষেত্রে প্রথম টেস্টের পরে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে তাকে আইসোলেশনে রেখেই চিকিৎসা দিয়ে যাবো। যখন আমরা নিশ্চিত হবো যে আসলেই তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত তখন তাকে কোভিড-১৯ যেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে পাঠিয়ে দিবো। আর যদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত না হয় তবে আমরা তাকে আমাদের এখানে মেডিসিনে বা বক্ষব্যাধিতে বা যেখানে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন সেখানে পাঠাবো। এক্ষেত্রে প্রথম ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে সেটার ফলাফল জানাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে আমরা ইমার্জেন্সি থেকে কোভিড-১৯ এর বিষয় নিশ্চিত হয়ে রোগীকে রেফারেল সিস্টেমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগও কমে যাবে।

সারাবাংলা: বর্তমানে অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ আসছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: একটু আগেই বললাম সেই টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজের কথা। কেনো হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ আসছে তা কী কেউ জানতে চেয়েছে ভেতরে গিয়ে? আমি যদি কোনো রোগীকে নিব তাকে কোনো একটা স্থানে আমাকে রাখতে হবে অবশ্যই। কোথায় দিবো? হয় সিসিইউতে দিবো নতুবা একটা ওয়ার্ডে দেবো নতুবা আইসিইউতে দিবো বা একটা সাধারণ বেডে দিবো। দেওয়ার পরে যদি দেখা যায় তিনি কোভিড-১৯ পজেটিভ তখন কী হবে? সেই ওয়ার্ডের সকল রোগীকে আমার আইসোলেশনে নিতে হবে। রোগীর সঙ্গে যে লোকজন থাকে তাদেরও আইসোলেশনে নিতে হবে নতুবা কোয়ারেনটাইনে পাঠাতে হবে। আমাদের বর্তমান অবস্থায় এটা কী সম্ভব? মডার্ন হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতালের আইসিইউ বন্ধ করতে হয়েছে। সেইখানের চিকিৎসকদের কোয়ারেনটাইনে যেতে হয়েছে। এভাবে যদি সকল স্থানের চিকিৎসকরা কোয়ারেনটাইনে যায় তবে কী অবস্থা হবে? প্রথম দিকে আমরা এই সমস্যাগুলো ফেস করেছি। এখন আস্তে আস্তে বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফ্লু-কর্নার, ওয়ান স্টপ কর্নার হচ্ছে।

সারাবাংলা: কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আলাদাভাবে হাসপাতাল করে সেখানের চিকিৎসকদের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যেতে পারে?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: এক্ষেত্রে আমাদের কোভিড-১৯ এর জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। যে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে সেই হাসপাতালেই চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের সেই হাসপাতালেই কোয়ারেনটাইনে থাকা দরকার। সেখানে চিকিৎসা দিবে। ১৫ দিন হোক বা এক মাস পর্যন্ত সময় তারা চিকিৎসা দিয়ে সেখান থেকে বের হওয়ার আগে আরও ১৫ দিনের কোয়ারেনটাইন পর্ব কাটাবে। এরপরে নিশ্চিত হবে যে তাদের কোভিড-১৯ নাই তারপরে তারা সেখান থেকে বের হতে হবে। পর্যায়ক্রমে রোস্টার মেনে করতে পারে। সেক্ষেত্রে একমাসের রোস্টার হতে পারে। এই সময়ে তার পরিবারের সকল দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে অবশ্যই। এক্ষেত্রে তারা পিপিই পড়া থেকে শুরু করে কিভাবে সেটা ডিসপোজাল করতে হবে বৈজ্ঞানিক ভাবে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

সারাবাংলা: পিপিই কী সবার পড়তে হবে?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: আমাদের দেশে কিছু বিষয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় সব দেশেই এখন পিপিই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী যারা আছে তাদের সেই সীমাবদ্ধগুলোও মেনে নিতে হবে। কিন্তু সেগুলো মেনে নিয়েই আমাদের কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তবে নিরাপত্তা ছাড়া তো আর লড়াই করা যায় না। আবার শুধুমাত্র চিকিৎসকরাই পিপিই পড়বেন তা কিন্তু না। স্বাস্থ্য কর্মীদেরও পিপিই পড়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফার্স্ট কন্টাক্ট এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সেই ফার্স্ট কন্টাক্টে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অবশ্যই পিপিই লাগবে। অন্যদের না হলেও চলে। বহির্বিশ্বে কোভিড-১৯ ডায়াগনসিস হয়ে আসে। আমাদের এখানে কিন্তু সেভাবে আসে না। এক্ষেত্রে আপনি যখন অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা দিবেন আর বলবেন সেই দেশে এমন হয়েছে, ঐ দেশে তেমন হয়েছে সেক্ষেত্রে আগে প্রশ্ন করতে হবে তাদের সঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্য সেবার মান কী এক? প্যারালালভাবে যখন দুইটা দেশের স্বাস্থ্যসেবা এক হবে তখন আমি সেক্ষেত্রে উদাহরণ দিতে পারবো। অন্যক্ষেত্রে না কারণ আপনি সেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের কী কী সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা উল্লেখ করছেন না। প্রতিটা খাতের জন্য আলাদা ভাবে যার যার কাজের জন্য অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।

সারাবাংলা: পিপিই নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে যথেষ্ঠ মজুদ আছে। কারণ সবার পিপিই প্রয়োজন নাই। এ বিষয়ে কী আপনি একমত?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: যেহেতু কর্তৃপক্ষ বলছে তাই এক্ষেত্রে কোনো মন্তব্য করবো না। কিন্তু একটা বিষয় তাও থেকে যায়। সবার পিপিই লাগে না এটা নিয়েও যদি মন্তব্য না করি তবে প্রতিদিন কতগুলো পিপিই লাগবে তা কী কেউ হিসেব করেছে? যেকোনো ডিজপোজেবল পিপিই কিন্তু একবার ব্যবহারযোগ্য। রিইউজেবল পিপিই দিয়ে কী কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা দেওয়া যাবে সরাসরি? যখন দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে কী পরিমান পিপিই লাগতে পারে তা কী কেউ পরিকল্পনা করেছে? কত থানায় কয়টা করে লাগবে তা কী কোনো পরিকল্পনা করা হয়েছে? ৬৪টা সদর হাসপাতালসহ বাকি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা কী তাহলে নিশ্চিত করা যাবে? যদি চিকিৎসকরা আক্রান্ত হয় তবে কী এই কথা কেউ বলতে পারবে তখন যে সবার পিপিই দরকার নাই? এক্ষেত্রে যদি পিপিই দিতে না পারে পরিপূর্ণভাবে সেটাও বলে দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে দেশের জন্য বিকল্প কিছু ভেবে চিকিৎসকরা অবশ্যই এগিয়ে যাবে কারণ কেউ পেছানোর মতো না এদেশে।

সারাবাংলা: কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে এই মুহূর্তে সতর্কতা হিসেবে কী কী করা দরকার বলে মনে করেন?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: সবাই বাসায় থাকবে এটা হলো এই মুহূর্তের সবচাইতে বড় সতর্কতা। যারা আমরা স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকরা আছি তারা পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে যাবো। ফার্স্ট কন্টাক্টে যারা রোগীদের সেবা দিবে তাদের অবশ্যই যথাযথ পিপিই পড়ে সেবা প্রদান করতে হবে। সেই পিপিই কে আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ডিসপোজ বা মেইনটেইন করতে হবে।

সারাবাংলা: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের জন্য কোনো কিছু বলবেন?

ডা. আশরাফুল হক সিয়াম: একটা কথাই বলবো। আর তা হলো আমরা আছি এখানে রোগীদের জন্য। কেউ আসলে এখানে চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাবে না। আমরা ইতোমধ্যেই একটি হটলাইন নম্বর চালু করেছি। নম্বরটি হলো ০১৬৪৬-৮৩৪১০২। এই নম্বরে ফোন করলে যে কেউ স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবে। সবাই বাসায় থেকে নিজেদের নিরাপদ ও সুস্থ রাখবেন সেটাই আশা করি। যদি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয় তবে আমরা আছি সকলের পাশে।

করোনা জাতীয় স্বাস্থ্য হৃদরোগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর