অবশেষে ঢামেক বার্ন ইউনিটেই হচ্ছে করোনা আইসোলেশন
১৬ এপ্রিল ২০২০ ১৩:১৭
ঢাকা: বাংলাদেশে দিন দিন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে অন্যান্য জেলার চেয়ে ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। সেজন্য চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। আর এ জন্যই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার সিদ্ধান্তে ফিরে এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও বার্ন ইউনিটের রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় দুদিন আগেই সিদ্ধান্তটি স্থগিত করা হয়েছিল।
বুধবার (১৫এপ্রিল) বিকেল থেকে ঢামেক বার্ন ইউনিটের রোগীদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে ঢামেক কর্তৃপক্ষ বার্ন ইউনিটে করোনাভাইরাসের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড না খুলতে অনেক চেষ্টা করেছে।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে বুধবার বিকেলে রোগী স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি জানান, ঢামেক বার্ন ইউনিট ১০০ শয্যার হাসপাতাল। সেখানে রোগী আছে প্রায় ৩০০ জন। এতগুলো পোড়া রোগী স্থানান্তর করা খুবই রিক্সের ব্যাপার। এমনকি রোগীদের জন্য খুব কষ্টের। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে সেটা স্থগিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেটা এখন বাতিল হয়েছে। ঢামেক কর্তৃপক্ষ আমাদের রোগী স্থানান্তর করতে বলেছে। বার্ন ইউনিটের রোগীদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নেওয়া হচ্ছে।
ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, আইসোলেশন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সে কারণে স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া বার্ন ইউনিটে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। এই কারণে ঢামেক বার্ন ইউনিট থেকে রোগীর স্থানান্তর করে সেটি ভবনটিকে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল সেন বলেন, ‘আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। বার্ন ইউনিট থেকে রোগীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। তাদের জন্য এখানে দেড়শ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। এমনকি স্থানান্তর করা রোগীদের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে।’
ঢামের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন জানান, রোগী স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢামেক বার্ন ইউনিট আইসোলেন ওয়ার্ডের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
এর আগে গত শুক্রবার (১০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আসে বার্ন ইউনিটে করোনাভাইরাসের রোগীদের আইসেলেশন ওয়ার্ডের প্রস্তুত করতে। তখন অনেক চিকিৎসদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। রোগীদের কথা চিন্তা করে অনেক আলাপ আলোচনার পর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তও বেশি দিন টিকলো না। অবশেষে সেখানেই আইসোলেশন ইউনিট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
বার্ন ইউনিটের একাধিক চিকিৎসক বলেছিলেন, সরকার যেটা ভালো মনে করে সেটাই করবে। কিন্তু বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীর চিকিৎসায় কতটুকু সফল হবে সেটাই ভাবার বিষয়। কারণ বার্ন ইউনিটের সামনে বৃহত্তর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। সেখানে অন্যান্য রোগী আসে শত শত। বার্ন ইউনিটের পিছনে চিকিৎসকদের ডর্মেটোরি। সেখানে তারা পরিবার নিয়ে থাকেন। বার্ন ইউনিট ও ঢামেক হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক। বার্ন ইউনিটে সিকিউরিটির জন্য শত শত আনসার সদস্যরা থাকে।
চিকিৎসকরা আরও বলেছিলেন, ভাইরাস কখন কার হবে বলা মুশকিল। এসব রোগীর চিকিৎসার জন্য দরকার হয় আলাদা ধরনের হাসপাতাল। কিন্তু বার্ন ইউনিট চারদিক দিয়ে ফাঁকা। আইসিইউ’র ভেন্টিলেশন অবস্থাও ভালো না। সেখানে কতটুকু সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে।