Wednesday 04 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া


১৬ এপ্রিল ২০২০ ১৪:০৪ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ ঠেকাতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে সংকটকালে ক্লাসের দরজা বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এখন অনলাইনে চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের শিক্ষা কার্যক্রম।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতাটা একেবারেই নতুন। নতুন হলেও এই মাধ্যমটিই এখন একমাত্র ভরসা।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষা কার্যক্রম টেলিভিশনের মাধ্যমে নেওয়া হলেও, উচ্চশিক্ষায় দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস নিচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। ফেসবুক গ্রুপ থেকে শুরু করে গুগল ক্লাসরুম, জুম, ডুয়ো, ভাইভার, হোয়াটসঅ্যাপ, হ্যাংআউট সহ নানা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন শিক্ষকেরা।

বিজ্ঞাপন

ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে এসব ক্লাসের অনেক সুবিধা থাকলেও, রয়েছে কিছু বিপত্তিও। যেমন: ক্লাসের সময় পেরিয়ে গেলেও ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ক্লাসে যুক্ত হতে পারেন না অনেক শিক্ষার্থী। আবার অনেকের ক্ষেত্রে নেই যুক্ত হবার ডিভাইসও। তবে সব মিলিয়ে এভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।

রাজধানীর ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের শিক্ষার্থী মাহবুব কামাল বলেন, এই সময়টায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেশনজট হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকত। এখন সেটি নেই। আমাদের ক্লাসের প্রত্যেক শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন অনলাইন ক্লাসে। ফলে সেমিস্টারের কোর্সগুলো পড়া হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে।

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী মেহজাবিন ফওজিয়া তিসা বলেন, আমরা সম্মান শেষ করবো করবো করছি কিন্তু এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ক্লাস বাকি ছিল, সেগুলো এখন অনলাইনে করছি। শিক্ষকেরা বলেছেন, ক্যাম্পাস খুললেই পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া হবে। ভিডিওকলে ক্লাস করার পর মনে হলো, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শান্তা বলেন, বন্ধের কালে ঘরে বসে করার মত এমন কিছুই ছিল না। ফলে একসময় যে ক্লাসকে ভয় পেতাম, এখন সেটিকেই আশীর্বাদ মনে হচ্ছে। ক্লাস অনেকটা আড্ডার ছলে নেওয়া হয়। তাই বিরক্তি ছাড়াই শেখা যাচ্ছে অনেক কিছু।

এদিকে ইন্টারনেটের ধীরগতি ও উচ্চমূল্যের কারণে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অনেকেই অংশ নিতে পারছেন না বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়াস আহমেদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরবঙ্গে নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন তিনি। সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ অনেক বেশি ধীর গতির, তাই অনলাইনে ক্লাস চললেও সেখানে যুক্ত হতে পারছেন না তিনি।

পিয়াস বলেন, গ্রামে মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও কলিং খুবই কঠিন একটি বিষয়। কারণ দূর্বল নেটওয়ার্ক। এখন ক্লাস চললেও, আমি দুটির বেশি ক্লাসে অংশ নিতে পারিনি। শিক্ষকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওনারা বলেছেন ছুটির পর মেইক-আপ ক্লাস করাবেন।

এদিকে করোনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই অনলাইনে ক্লাস বা শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। শিক্ষার্থীদের গেজেট স্বল্পতার কথা বিবেচনা করে আপাতত ক্লাস বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাস খোলার পর প্রতিদিন একাধিক অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, চাইলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া যেতো কিন্তু আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি আগে বিবেচনা করতে হয়েছে। অনেকের হয়তো ভাল ফোন বা ল্যাপটপই নেই। সে কিভাবে ক্লাসে যুক্ত হবে? বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এবার গ্রামে চলে গেছে। সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত ধীরগতির। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি না। ছুটির পর প্রচুর ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিতে উৎসাহ দিলেও পরীক্ষা নিতে আপত্তি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

গত ২৪ মার্চ ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে (ইউজিসি) অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উৎসাহিত করা হয়। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিসহ বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করে।

তবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সুবিধার আড়ালে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিতেও শুরু করেছে। আর এতেই আপত্তি জানিয়েছে ইউজিসি। তারা অনলাইনে পরীক্ষা ও ভর্তি নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে ইউজিসি’র নির্দেশের কথা জানানো হয়।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নভেল করোনভাইরাস বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর