Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লকডাউনে বেকার পরিবহন খাতের কোটি শ্রমিক, পথ খুঁজছেন মালিকরাও


১৬ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪৫

ঢাকা: বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে অবরুদ্ধ গোটা দেশ। সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতও। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন পরিবহন খাতের প্রায় এক কোটি নিম্ন আয়ের শ্রমিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে এরই মধ্যে প্রতিদিন কয়েকশ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে পরিবহন খাতে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই লোকসান গোটা দেশের অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এই খাতের নিয়োজিত অল্প আয়ের শ্রমিকরা।

পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টর বলছেন, সড়ক ও নৌপরিবহন মিলিয়ে পরিবহন খাতে নিয়োজিত প্রায় এক কোটি শ্রমিক। তাদের ৯০ ভাগই দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সড়ক ও নৌপথে যান চলাচল বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিকদের এখন দিন কাটাতে হচ্ছে বসে। ফলে বন্ধ হয়েছে উপার্জন, কাউকে কাউকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এসব শ্রমিকদের সহযোগিতায় কোনো সমন্বিত উদ্যোগও নেই। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন খাতের মালিকরা শ্রমিকদের সহায়তার বিষয়ে আলোচনায় বসলেও উদ্যোগ নেই লঞ্চ মালিকদের।

সড়ক পরিবহন খাতের পরিস্থিতি তুলে ধরে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিদিন সড়কে ৪ লাখ গাড়ি, ৩ লাখ ট্রাক, এক লাখ বাস চলাচল করে। মালিকের আয়, শ্রমিকের মজুরি সড়কে আরও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে এই করোনাভাইরাসের কারণে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায় আপাতত দেখছি না।

করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্যাকেজের আওতায় পরিবহন খাত অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, সে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারেননি তারা। প্রণোদনা পেলে সেটি তাদের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হতো বলে মনে করছেন তারা।

শ্রমিকদের সহায়তা প্রসঙ্গে এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, আমার এনা ট্রান্সপোর্টের শ্রমিকদের ২০ লাখ টাকার সহযোগিতা এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। অন্য বাস মালিকরাও আলাদা আলাদাভাবে শ্রমিকদের সহায়তা দিচ্ছেন। তবে এই দুর্দিনে সমন্বিতভাবে শ্রমিকদের কীভাবে সহায়তা করা যায়, সে বিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি। সরকারে কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এনায়েত উল্ল্যাহ আরও বলেন, দেশের যেকোনো একটি খাত পিছিয়ে বা লোকসানে পড়ার অর্থ সামগ্রিক অর্থনীতিতেই চাপ তৈরি হওয়া। করোনাভাইরাস সেখানে সব খাতে প্রভাব ফেলছে। প্রচুর শ্রমিককে বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেও বিভিন্ন খাতে চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অবরুদ্ধ পরিস্থিতে কর্মহীন হয়ে পড়া সড়ক ও নৌপরিবহন খাতের ৯০ লাখ শ্রমিকের পাশে দাঁড়াতে বাস ও নৌ মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের সড়ক পরিবহন খাতে ৭০ লাখ শ্রমিক রয়েছে, নৌপরিবহন খাতে এই সংখ্যা আরও ২০ লাখ। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পরিবহন খাত লকডাউন থাকায় এসব শ্রমিক এখন বেকার। দীর্ঘদিন পরিবহন বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিকদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি এবং ‘পারাবত’ লঞ্চের মালিক মো. শহীদ ভূইয়া জানান, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। এই প্রভাব ভবিষ্যতেও কাটিয়ে ওঠা মুশকিল হবে। আমরা এরই মধ্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করে আর্থিক সহায়তা চেয়েছি।

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদ ভূইয়া বলেন, আমার মালিকানাধীন লঞ্চের সব শ্রমিকদের বেতন-ভাতা শিগগিরই দিয়ে দেব। আপাতত শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি।

জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে না। তবে নৌপরিবহন মালিকরা কিছু দাবি-দাওয়া জানিয়েছেন। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব।

করোনা করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস পরিবহন শ্রমিক লকডাউন শ্রমিক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর