Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রাবেয়া জন্ম থেকেই দুর্বল, রোকাইয়া ঠিক আছে’


১ মার্চ ২০১৮ ২২:০০

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘রাবেয়া ছোটবেলা থেকেই একটু দুর্বল প্রকৃতির কিন্তু রোকাইয়া ঠিক আছে। গত কাল রাতের বেলাতে দুজনই বমি করেছে। কিন্তু আজ সকাল থেকে রোকাইয়া ঠিক থাকলেও রাবেয়া অসুস্থ হয়ে গেছে। বমি করেছে সকালেও-তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই। আসলে আমরাও ভয় পাচ্ছি না। কেবল মেয়ে দুটোর কষ্টে কষ্ট পাচ্ছি।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থতলার পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে বৃহষ্পতিবার (০১ মার্চ) সারাবাংলাকে এসব কথা বললেন জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন।

পাবনার চাটমোহরের অমৃতকুণ্ডু গ্রামে জন্ম নেওয়া জোড়ার মাথার শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার চিকিৎসায় ২১ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয় গত ২১ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু দুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করছেন।

গতকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি রাবেয়া-রোকাইয়ার সবচেয়ে বিপদজনক দ্বিতীয় ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করেছেন চিকিৎসকরা। এদিন চিকিৎসকরা শিশু দুটির মস্তিষ্কের মূল রক্তনালী বন্ধ করে বিকল্প রক্তনালীর পথ সচল করেছেন। আর বিকল্প সে পথে রক্ত চলাচলের পথ তৈরি হয়েছে এবং বিকল্প পথে রক্ত চলাচল শুরুও হয়েছে। আর এরপরই চিকিৎসকরা পরবর্তী ধাপের কথা চিন্তা করছেন।

পরবর্তী চিকিৎসার অংশ হিসেবেই বৃহষ্পতিবার বিকেলে রাবেয়া রোকাইয়ার এমআরআই করা হয়। এমআরআই-এর পরে রাবেয়া-রোকাইয়াকে পোস্ট অপারেটিভ থেকে স্থানান্তর করা হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে তাদের জন্য নির্ধারিত কেবিনে। ওরা বর্তমানে সুস্থ আছে। আগামী দুই থেকে তিন দিন পর তাদের হাসপাাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

আজ বৃহষ্পতিবার তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘মেয়ে দুটো কালো হয়ে গেছে, যা ধকল গিয়েছে গত দুইদিন ধরে। বলতে গেলে কিছুই খাওয়া হয়নি ওদের। গতকাল রাতে ক্যানোলা খুলে যাওয়াতে— কয়েকবার চেষ্টা করে তা ফের হাতে করতে হয়েছে।  তবে এত ধকলের পরও মেয়ে দুটি তেমন কোনো শারীরিক জটিলতা ছাড়াও ভালো রয়েছে, সুস্থ রয়েছে— এটাই আমাদের সান্ত্বনা; এখন কেবল সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, সব যেন ঠিক থাকে।’

রাবেয়া-রোকাইয়াকে কী করে পৃথক করতে পারেন জানতে চাইলে তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘আমি তো মা, আমি চিনি। তারপরও ওদের দুজনের কিছু সূক্ষ্ণ পার্থক্য রয়েছে যেটা হঠাৎ করে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। যেমন— ছোট থেকেই রাবেয়া একটু হালকা, পাতলা আর রোকাইয়া একটু ভারী, ওর স্বাস্থ্যটা একটু ভালো।’

রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার জন্য হাঙ্গেরি থেকে এসেছেলিন দুই নিউরো সার্জন স্টিফেন হুডোক ও অ্যান্ড্রু সুকে। তারা আগামীকাল শুক্রবার ফিরে যাচ্ছেন নিজ দেশে। তবে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন রাবেয়া-রোকাইয়ার এমআরআই-এর সিডি, জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।

ডা. সেন বলেন, ‘ওরা সিডি নিয়ে নিজেদের দেশে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আরও পর্যালোচনা করবেন। ভবিষ্যতের করণীয় সর্ম্পকে কীভাবে আগানো যায়— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আগামী এপ্রিল মাসের শেষে অথবা মে মাসের শুরুতে তারা আবার আসবেন এবং ওই একই সময়ে রাবেয়া-রোকাইয়াকে নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে আসার জন্য বলবেন ওদের বাবা-মাকে।’

ডা. সামন্ত লাল সেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনমাস পর চিকিৎসক ও রোগীরা ফের আসবে। তখন ওদের মাথার ভেতরে বেলুন প্রতিস্থাপন করে মাথা পৃথক করার চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার করা হবে।’

‘রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আমরা অত্যন্ত ভয়ে ছিলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই কেবল পথটা কঠিন জেনেও এ পথে আগাতে পেরেছি আমরা। কেবল আমরা নই, যে দুজন নিউরো সার্জন এসেছেন ওদের চিকিৎসার জন্য তারা বিশ্বখ্যাত। গতকাল দ্বিতীয় ধাপে মাথার ভেতরে থাকা রক্তনালীগুলো যিনি বন্ধ করেছেন সেই চিকিৎসক ৩২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্টিফেনও খুব শিহরিত ছিলেন।’

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘গতকাল ওদের মাথার ভেতরের ২৪ থেকে ২৬টি শিরা বন্ধ করেছে স্টিফেন। আর এ নিয়ে স্টিফেন আমাদের (চিকিৎসকদের) বলেছেন, নয়টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত পুরো সময়টা আমার জন্য ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। একটি একটি করে শিরা আমি বন্ধ করছিলাম আর শিহরিত হচ্ছিলাম। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো মূহুর্তে শিশু দুটি মারা যেতে পারত। কারণ, যে পদ্ধতিতে এই কাজটি করা হচ্ছিল— সেটি আমার জন্যও ছিল প্রথম।’

‘তবে সে গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি আমরা সবার দোয়াতে পার করে এসেছি। এখন কেবল ভবিষ্যতের অপেক্ষা। আপনারা সবাই দোয়া করবেন যেন, শিশু দুটিকে আমরা সফলভাবে পৃথক করতে পারি। তাতে করে ওরা নতুন জীবন পাবে।’ —পরিশেষে এভাবেই শুভ কামনাজাত আহ্বান রাখলেন সামন্ত লাল সেন।

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর