ব্যারাকে গাদাগাদি, ঝুঁকি এড়াতে পুলিশ থাকবে নিকটস্থ হোটেলে
১৭ এপ্রিল ২০২০ ১১:৫৮
ঢাকা: করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে রাজধানীতে ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য অনেক দিন ধরে বাড়িতে যেতে পারছেন না। থানা ব্যারাক কিংবা পুলিশ ব্যারাকে গিয়েও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। ফলে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ থানার আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোটেলের একেকটি রুম নিয়ে থাকতে পারবেন একেকজন সদস্য।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএমপি থেকে জানা যায়, রাজধানীতে ৫০টি থানার পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসের এই সাধারণ ছুটির মধ্যেও নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি পুলিশ লাইন্স ও পিওএম সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। এদের অনেকেই কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে বাসায় ফেরেননি। করোনা পরিস্থিতির কারণেই পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসায় ফিরতে পারছেন না তারা। আবার থানা কোয়ার্টার বা পুলিশ লাইন্সেও থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় কোনো একজন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ওই ব্যারাক বা থানার সব সদস্যই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। সেক্ষেত্রে গোটা এলাকাই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম একটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের পর সামাজিক দূরত্ব মেনে শোয়ার বা বিশ্রামের জায়গা পাচ্ছেন না, তারা থানার আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে রুম নিয়ে থাকতে পারবেন। যেসব হোটেলে ‘গেস্ট’ নেই, সেসব হোটেলের একেকটি রুম নিয়ে একেকজন থাকতে পারবেন।
ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা একনাগাড়ে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের বিশ্রামে রেখে আরেকটি দলকে মাঠে নিরাপত্তা দিতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ইউনিটকে ভাগ ভাগ করে ডিউটি করতে বলা হয়েছে ওই নির্দেশনায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ সদস্যরা ছোট ছোট গ্রুপে ডিউটি করতে গিয়ে কেউ আক্রান্ত হলেও তাতে শুধু ওই গ্রুপটিকে কোয়ারেনটাইনে পাঠালেই চলবে। সে কারণেই ছোট ছোট গ্রুপে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার, আরেকজন কনস্টেবল। ওই টিমের বাকি সদস্যদের হোম কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে।
আর পুলিশ সদর দফতর থেকে জানা যায়, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও পুলিশের দায়িত্ব ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ ত্রাণ দিচ্ছে, কেউ লকডাউন মানাতে কাজ করছে, কেউ নিরাপত্তা বিধানে কাজ করছে, কেউ রোগীকে হাসপাতালে নিচ্ছে, আবার কেউ করোনায় মৃতদেহ সৎকারের কাজ করছে। এতে করে সবার ঝুঁকি কমেছে। দায়িত্ব পালন শেষে থানায় বা ব্যারাকে থাকতে যাদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের নিকটস্থ আবাসিক হোটেলে থাকতে বলা হয়েছে। আর যেখানে হোটেল নেই, সেখানে তাবু টাঙিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরও সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় কথা বলে জানা যায়, সেখানকার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) করোনায় আক্রান্ত হলে সরাসরি ১৫ পুলিশ সদস্যসহ চিকিৎসক, ওষুধ বিক্রেতাসহ ৮০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। বদলি হয়ে আসা পরিদর্শকসহ ৪০ পুলিশ সদস্য এখন ভৈরব থানায় কর্মরত। নতুন ফোর্সদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে এক বস্তা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পুরো থানা ধোয়ামোছা করা হয়েছে। থানার সুইপার, বাবুর্চি তো বটেই, হাড়ি-পাতিল পর্যন্ত বদলে ফেলা হয়েছে। একইভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার ৬৬ পুলিশ সদস্য।
আবাসিক হোটেলে থাকার নির্দেশনার ব্যাপারে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, করোনায় যেন সব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন এবং বিশ্রাম নিতে পারেন, সে জন্য কমিশনার একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা এখন সুবিধা অনুযায়ী আবাসিক হোটেলগুলোতে বিশ্রাম নিতে এবং অবস্থান করতে পারবেন।
পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেন্টু মিয়া বলেন, পল্টন থানার অন্তর্ভুক্ত অন্তত ২০টি আবাসিক হোটেলের রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদস্যদের থাকার জন্য। এসব হোটেল এমনিতেও বোর্ডার ছিল না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হোটেল ছেড়ে দেওয়া হবে।
মতিঝিল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, মতিঝিল এলাকার প্রায় ২৫টি হোটেলের রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মতিঝিল থানা পুলিশের জন্য, বাকি ১৫টি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের সদস্যদের জন্য। একেকজন একটি কক্ষে অবস্থান করবেন। তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে পুলিশ লাইন্স থেকে।
তেজগাঁও থানার এসআই প্রদ্দুত কুমার বলেন, ফার্মগেট এলাকার অন্তত ১০টি আবাসিক হোটেল পুলিশ সদস্যদের জন্য নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে পিওএম সদস্যরা অবস্থান করবেন। একইভাবে বনানী, গুলশান, মিরপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, নীলক্ষেত ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকার আবাসিক হোটেল বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে।
হোটেল কর্তৃপক্ষকে এর বিনিময়ে কোনো টাকা দেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ডিএমপি অ্যাক্টে আপৎকালীন সময়ে এসব শূন্য হোটেল কক্ষ ব্যবহার করতে পারবে পুলিশ। কাজেই কোনো টাকা দিতে হবে না।
আর পুলিশ সদর দফতরের সহকারী উপমহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে, এরপরও পুলিশকেই সব কাজে এগিয়ে আসতে হবে। সে কারণে সুরক্ষামূলক কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। সেই অনুযায়ী কাজ করছে পুলিশ।
আবাসিক হোটেল করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি করোনাভাইরাস বাংলাদেশ পুলিশ ব্যারাক হোটেলে রুম বরাদ্দ