লুটপাটের মহামারি শুরু হতে যাচ্ছে: রিজভী
১৮ এপ্রিল ২০২০ ১৫:২২
ঢাকা: দলীয় লোক দিয়ে ত্রাণ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় লুটপাটের মহামারি শুরু হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে দলীয় লোক দিয়ে ত্রাণ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার মানে এই তালিকায় কেবল আওয়ামী লীগ করা লোকজনের ঠাঁই হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, ত্রাণ কার্যক্রমে দলীয় কমিটির কারণে চাল চুরি আরও বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘দলীয় তালিকা করে দলের লোকজন খাবে আর অন্যরা না খেয়ে মরবে। ধরেই নেওয়া যায়, লুটপাটের মহামারি শুরু হতে যাচ্ছে। সুতরা আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে ত্রাণ তালিকা করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’
রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিশ্ববাসী আজ দিশেহারা। বাংলাদেশে বিরাজ করছে ভয়াল পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও হেয়ালীপনার কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে প্রতিদিন দেশজুড়ে বিস্তার ঘটছে এই মহামারির।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ভয়াবহ সংক্রমিত দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে ১৫-২০ দিনে। আর বাংলাদেশে তা হচ্ছে মাত্র চার দিনে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মেডিক্যাল সরঞ্জামের বিষয়ে কেউ যেন কথা বলতে না পারে সেজন্য গতকাল সরকার কঠোর পরিপত্র জারি করেছে। সরকার তাদের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে দমনের নীতিকেই কার্যকর করছে।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা এখন পর্যন্ত কেউ অনুধাবন করতে পারছে না। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে জনগণ জানতে পারছে না আসলে হচ্ছেটা কী? অথচ দুনিয়াজুড়ে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সংকটে আলাপ-আলোচনার পথ প্রশস্ত রাখার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘ভয়ঙ্কর খাদ্য সংকট নিরসনে মুক্ত আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। অথচ সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত রেখেছে। সরকারের ভুল বা ব্যর্থতা ধরিয়ে দেওয়া চক্রান্তের অংশ নয়, বরং তা গণতন্ত্রের অংশ।’
জনগণের জীবন নিয়ে জুয়া খেলার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘১৬ এপ্রিল সারাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে সরকার। ‘সারাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ এটি বুঝতে সরকারের কেন এত দেরি হলো? মানুষ বাঁচাতে হলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিনিয়ত মাঠে থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন নেতাদের তো জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেখছি না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো কোনো হাসপাতাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন না।’
রিজভী বলেন, ‘সংক্রমণ রোধে লকডাউন অপরিহার্য। কিন্তু লকডাউনে দেশের কোটি কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। এই অবস্থায় গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য ‘ত্রাণের চাল বরাদ্দ, ‘ওএমএস কর্মসূচি’ কিংবা কম দামে ‘টিসিবি’র মাধ্যমে তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু কোনো গণবিরোধী সরকার ও প্রশাসনের হাতে পড়লে যে কোনো শুভ উদ্যোগও ‘কলঙ্কজনক অধ্যায়’ হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। এর মধ্যেও রোগীদের চিকিৎসায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়নি। রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল প্রস্তুতির যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেখানেও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিবর্তে নির্বাচন করা হয়েছে আউটডোর ক্লিনিক। সেখানে অক্সিজেনের সুবিধা পর্যন্ত নেই, নেই অপারেশন থিয়েটার।’
রিজভী বলেন, ‘করোনার রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউতে ভেন্টিলেটর মেশিন ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের সুবিধাসহ পৃথক হাসপাতাল স্থাপন করতে পারেনি। এখন চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় বাড়ছে রোগীদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুহার। মূলত, বাংলাদেশে করোনার কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না, চারিদিকে কেবল মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।’