Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতে আটকাপড়া ৩৫০ শিক্ষার্থী দেশে ফিরতে চায়


১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৯:০৬

ঢাকা: ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে সাড়ে তিনশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। লকডাউনের কারণে দোকানপাট বন্ধ থাকায় তারা খাবার কিনতে পারছেন না। আবার হাতে থাকা অর্থ ফুরিয়ে আসায় খাবার সংকটের কথাও জানিয়েছেন তারা। এমন অবস্থায় তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন ওইসব শিক্ষার্থী।

শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে পাঞ্জাবে অবস্থারত চারজন শিক্ষার্থী এমন তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ভারতে অবস্থারত শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান নাহিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাঞ্জাবে আমরা ৩৫০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকা পড়েছি। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন। পুরো ভারতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন থাকলেও এখানে প্রথমে তা ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। এখন পুরো ভারতেই ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন। এখানকার দোকানপাট বাজার সব বন্ধ। যা খাবার আমারা কিনে রেখেছিলাম তা প্রায় শেষের পথে। সব শিক্ষার্থীর একই অবস্থা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের কাছে যে টাকা ছিল তা শেষ।’

লকডাউনের কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রকার লেনদেন আমরা করতে পারছি না। সব ব্যাংক বা অন্য যা মাধ্যম ছিল টাকা আনানোর তা সব বন্ধ। বর্তমানে এখানে শুধুমাত্র ভারতীয় লেনদেন করা যায়, আন্তর্জাতিক সব লেনদেন বন্ধ। খাবারের সঙ্গে আমরা এখন অর্থ ক্রাইসিসেও আছি।’

চন্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘করোনায় ভারতে দিন দিন রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ছি। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই। নানা সমস্যা নিয়ে দিল্লিতে অবস্থানরত বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করেছিলাম। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারাও এই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলতে পারতেছে না।’

বিজ্ঞাপন

চন্ডিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোমোবাইল ইঞ্চিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত কুমার ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে যে হারে দ্রুত করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, তা আমাদের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি আমাদের না নেওয়া হয়, ১০/১৫ দিন পর কী হবে তা বলা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে যে অর্থ ছিল তা প্রায় শেষ। বাড়ি থেকে টাকা আনাও সম্ভব হয়নি। আবার বর্তমানে এখানে সব কিছুর দাম বেশি। আবার তা যোগাড়ও করা যাচ্ছে না। সব মিলেয়ে আমরা বিপদে আছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে এ শিক্ষার্থী জানান, ১৬ জনের একটি তালিকা তারা অ্যাম্বাসিতে পাঠিয়েছিলেন। মুম্বাই অ্যাম্বাসী থেকে তাদের দিল্লিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়। বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় সেখান থেকেও তাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি।

এদিকে লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা ৩০২ জন শিক্ষার্থী আটকা পড়েছি। বাকিরা লকডাউন শুরু হওয়ার সময়েই বাংলাদেশে ফিরে গেছে। পরীক্ষা থাকায় আমরা ফিরতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হোস্টেলে থাকি না। বাইরে থাকি। দোকানপাট সব বন্ধ রয়েছে। আমাদের হাতে এখন অর্থও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু টাকা দিয়ে তা কিনতে হয়। খাবার কেনার টাকাও এখন আমাদের কাছে অবশিষ্ট নেই। আমরা ফিরে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বাসিতে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সাখওয়াত হোসেন সোহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব বন্ধ রয়েছে। ভার্সিটি থেকে আমাদের হেল্প করার চেষ্টা করছে। খাবারের ব্যবস্থা করেছি, কিন্তু তার জন্যে পে করতে হয়। সেই অর্থ আমাদের কাছে নেই। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই। সরকারের সহযোগিতা চাই।’

এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে ভারতে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ৮টি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

ইউএস বাংলার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা চাইলেও এসব ফ্ল্যাইটে ফিরতে পারবে। কিন্তু তারাগেই বেশিরভাগ সিট বুকিং হয়ে গেছে। চিকিৎসা ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে যারা ভারতে ছিলেন এসব ফ্ল্যাইটে তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভারতে অবস্থানরত শিক্ষার্থী নাহিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অ্যাম্বাসিতে কথা বলেছিলাম আমাদের জন্যে স্পেশাল ফ্লাইটের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু অ্যাম্বাসি থেকে জানানো হয়েছে স্পেশাল ফ্লাইটে শিক্ষার্থীরা ফিরতে পারবে না।’

করোনা করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভারত শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর