নতুন এডিপিতে গুরুত্ব পাচ্ছে করোনার অভিঘাত
১৯ এপ্রিল ২০২০ ২২:৪৫
ঢাকা: চলমান অর্থবছর শেষের দিকে। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছর সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজানোর কাজও চলছে। এরই অংশ হিসেবে চলছে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের কাজও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং অর্থনীতিতে এর অভিঘাতের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি। সেক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কৃষি খাতেও। আর নতুন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তি কিংবা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিকে।
প্রতিবছর জুন মাসে বাজেট ঘোষণার আগেই মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে নতুন অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। সে কারণে মার্চ নাগাদ শুরু হয়ে যায় এডিপি তৈরির কাজ। এ বছরও মার্চ মাসেই শুরু হয়েছে এডিপি প্রণয়নের কাজ। ২৩ মার্চ জারি করা হয়েছে এডিপি প্রণয়নের নির্দেশিকা। এরপর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও থেমে নেই এর কাজ। গত বুধবারও (১৫ এপ্রিল) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তি এবং এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এডিপি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, এবার এডিপি তৈরিতে বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে করোনা পরিস্থিতিকে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আপনারা শুনেছেন, করোনার কারণে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বিশেষ প্রভাব পড়ছে। এর প্রতিফলন থাকবে এডিপিতে। তাছাড়া মানুষের অভাব-অনটন দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এরই মধ্যে জারি করা এডিপির নীতিমালায় বলা হয়েছে— বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প যুক্ত করার ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র নিরসনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়ন, এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন, নদীভাঙন-জলাবদ্ধতা রোধে ড্রেজিং, নদী শাসন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সমন্বিত প্রকল্প প্রণয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এডিপি তৈরির নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সফটওয়্যার শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা বিকাশের মাধ্যমে রফতানি বাড়ানো ও কর্মসংস্থান তৈরির প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া এডিপিতে ৩০ শতাংশ প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে উদ্যেগ নিতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প নতুন এডিপিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেসব প্রকল্প এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশন প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিবেচনা করেনি, সেসব প্রকল্পকে ফের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে এর আগে অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত জমি কিংবা খাস জমি ব্যবহারের প্রস্তাব করতে হবে। তাছাড়া মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো (এমটিবিএফ) অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দের প্রক্ষেপণ বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করতে হবে।
প্রকল্পভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, শুধু অনুমোদিত প্রকল্প এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করতে হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট, আগামী অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এবং অধিক অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পিপিপি প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও কাঙ্ক্ষিত সুফল নিশ্চিত করতে এডিপিতে নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়ার চেয়ে চলমান প্রকল্প শেষ করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেবল অনুমোদিত প্রকল্প বরাদ্দসহ অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও প্রশাসনিক আদেশ ছাড়া কোনো প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিকতাসহ নতুন প্রকল্প তালিকায় যুক্ত করার প্রস্তাব দিতে হবে। পরিকল্পনা শৃঙ্খলা ও বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে চলতি অর্থবছরে শেষ করার জন্য নির্ধারিত কোনো প্রকল্প নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। এছাড়া আগামী ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে, এরকম কোনো প্রকল্পও মেয়াদ না বাড়িয়ে এডিপিতে যুক্ত করা যাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এডিপি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির অন্যতম উদ্দেশ্য হবে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-৪১ ও এসডিজি লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাতগুলোতে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ দেওয়া। এর মাধ্যমে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, পরিবহন, পরিবহন, ভৌত ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মতো বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকার পাবে। কমবেশি এর প্রতিটির সঙ্গেই চলমান করোনা সংকটও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। তাই এই সংকট মোকাবিলা এডিপি প্রণয়নে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
২০২০-২১ অর্থবছর ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি এডিপি এডিপি প্রণয়ন করোনাভাইরাস করোনার অভিঘাত করোনার প্রভাব পরিকল্পনা কমিশন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি