করোনায় জোরালো হচ্ছে অনলাইনে কোর্ট চালুর দাবি
২০ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৫০
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের এই সময়ে বিচারপ্রার্থীদের অধিকার রক্ষায় অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত আকারে হলেও কোর্ট চালু করতে আইনজীবীদের দাবি জোরালো হচ্ছে। বিনা বিচারে কারাবন্দিদের অধিকার রক্ষা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য আদালত চালু করতে অনলাইনের এক আলোচনায় এমনটি উঠে এসেছে।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে সীমিত আকারে হলেও কোর্ট চালু রাখতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, গতকাল রোববার (১৯ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নিকট অনলাইনে কোর্ট চালুর অনুরোধ জানিয়েছি। প্রধান বিচারপতি আমাকে জানিয়েছেন, শিগগিরই এ বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
আইনজীবী কাজল আরও জানান, লকডাইনের এই পরিস্থিতে কিভাবে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে তা নিয়ে জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটির সঙ্গে আজ অনলাইনে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এদিকে অনলাইনে কোর্ট চালু করার বিষয়ে আলোচনার জন্য ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ভার্চুয়াল অপারেশ’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনার করে সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন আইনজীবী। তাতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অনিক আর হক, জুনায়েদ চৌধুরী, রাশনা ইমাম, সাকিব মাহবুব ও আনাম হোসেন আলোচনা করেন।
অনলাইনের আলোচনায় সকলেই এই মত দেন যে, বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে ভারত, পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশগুলির মতো প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে সীমিত আকারে হলেও কোর্ট পরিচালনা হতে পারে।
তারা আরও অভিমত দেন, এভাবে আদালত একেবারে বন্ধ থাকলে বিনা বিচারে দীর্ঘকাল কারাগারে আটক থাকা ব্যক্তিদের অধিকার লংঘন হয়।
এ সময় আলোচকদের একজন বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বন্ধ থাকায় মৌলিক অধিকার প্রয়োগের বিষয়টিও স্থগিত রয়েছে যা সংবিধানের লংঘন।
সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের আওতায় নাগরিকরা এখন আইনের সুরক্ষা হতে বঞ্চিত রয়েছে উল্লেখ করে সীমিত আকারে অনলাইনে কোর্ট চালুর দাবি করেন।
আইনজীবী আমান হোসেন বলেন, এই পরিস্থিতে সরকার খাদ্য চিকিৎসাসহ অনেকগুলো বিষয়কে জরুরি বিষয় ঘোষণা করেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এর মধ্যেও চাল চুরিসহ ত্রাণ বিতরণে বেশ অনিয়ম হচ্ছে। এসব মৌলিক অধিকার রক্ষায় সংক্ষিপ্ত হলেও সুপ্রিমকোর্ট চালু রাখা যায় কি না সেটা বিবেচনা করা উচিত বলে মতামত দেন তিনি।
এদিকে গত শনিবারও সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী করোনায় দীর্ঘ দিন ধরে আদালত বন্ধ থাকায় জরুরি মামলার নিষ্পত্তির জন্য অনলাইনে কোর্ট পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে চিঠি দেন।
মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (সিসিবি ফাউন্ডেশন) এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম ও সংগঠনটির পরিচালক অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান এ চিঠি পাঠান।
চিঠিতে বলা হয়, করোনার সংক্রমন রোধে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু দেশে কোন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি সেহেতু স্বল্প পরিসরে হলেও আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া জরুরি। কেন না, বাংলাদেশ সংবিধানে দেশের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকার এসব অধিকার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংবিধান অনুসারে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ আদালতসমূহ একেবারেই বন্ধ থাকায় নাগরিকরা তাদের অধিকার বঞ্চিত হলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই করোনা সংক্রমণের মধ্যেও সাংবিধানিক বিবেচনায় অনলাইনের মাধ্যমে হাইকোর্টের এক বা একাধিক বেঞ্চ পরিচালনার অনুরোধ জানান তারা।