ঘরবন্দি মানুষ: চাহিদা বাড়ায় পানির ঘাটতি ঠেকেছে ১০ কোটি লিটারে
২০ এপ্রিল ২০২০ ১৬:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম নগরবাসী ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় আবাসিক খাতে পানির চাহিদা দিনে বেড়েছে প্রায় সাত কোটি লিটার। এ ছাড়া অন্যান্য খাত মিলিয়ে চট্টগ্রামে ওয়াসার সরবরাহে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে প্রায় ১০ কোটি লিটার।
ওয়াসা বলছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বারবার হাত ধোয়া, গোসল ও জীবাণুনাশক পানি ছিটানো বেড়ে যাওয়ায় পানির চাহিদাও বেড়েছে। অনাবাসিক খাতে পানির ব্যবহার কিছু কমলেও বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থাটি। এদিকে ঘরবন্দি গ্রাহকের বিল পরিশোধের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় আগামী জুন পর্যন্ত বিলম্ব মাশুল মওকুফ করেছে ওয়াসা।
ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক সংযোগ আছে বর্তমানে প্রায় ৭৬ হাজার। এর মধ্যে ৬৭ হাজার ৭০০টি আবাসিক খাতে। প্রায় নয় হাজারের মতো আছে অনাবাসিক খাতে। করোনা পরিস্থিতি সৃষ্টির আগে পানির চাহিদা ছিল দৈনিক ৪২ কোটি লিটার। উৎপাদন ছিল ৩৬ কোটি লিটার। ঘাটতি ছিল ৬ কোটি লিটার। করোনা পরিস্থিতিতে ঘাটতি আরও বেড়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মো. মাকসুদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে পানির চাহিদা বেড়েছে প্রায় সাত কোটি লিটার। অর্থাৎ চাহিদা প্রায় ৪৯ কোটি লিটারে গিয়ে ঠেকেছে। এ অবস্থায় আগের ছয় কোটি লিটারসহ হিসেব করলে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১৩ কোটি লিটার। শিল্প-কারখানা, হোটেল-রেস্তোঁরা বন্ধ থাকায় অনাবাসিক খাতে প্রায় দুই কোটি লিটার চাহিদা কমেছে। তাহলে ঘাটতি ১১ কোটি লিটার। ডিপটিউবওয়েল চালু করে জরুরি ভিত্তিতে আমরা উৎপাদন বাড়িয়েছি এক কোটি লিটার বা তার চেয়ে সামান্য বেশি। সব মিলিয়ে আমাদের ১০ কোটি লিটারের মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ যখন ২৪ ঘণ্টা বাসায় থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে বারবার হাত ধুচ্ছে, গোসল করছে, বাসা পরিষ্কার করছে, ভবনে পানি ছিটাচ্ছে। ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার কথা বলা হলেও দেখা যাচ্ছে টেপ খুলে রাখায় ১৫ সেকেন্ড ধরে পানির অপচয় হচ্ছে। এভাবে আবাসিক খাতে পানির ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি, পানির জন্য যেন মানুষের মধ্যে কোনো অসন্তোষ তৈরি না হয়। ২০টি ডিপ টিউবওয়েল চালু করেছি। ট্রাক-ভাউচারে করেও পানি বিতরণ করা হচ্ছে।’
ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, বাকলিয়া, পতেঙ্গা, কাট্টলী, হালিশহরসহ নগরীর বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পানির চাহিদা আগের তুলনায় বেশি। এসব এলাকায় বস্তির সামনে ট্রাক-ভাউচারে করে পানি বিতরণ করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে গ্রাহকরা সেখান থেকে পানি পাচ্ছেন। এছাড়া পানির চাপ কমিয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে।
প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ বলেন, ‘এক এলাকায় ৬ ঘণ্টা পানির ফুল প্রেসার থাকলে, পরবর্তী ৬ ঘণ্টা সেখানে কমিয়ে অন্য এলাকায় দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো এলাকায় পানির সরবরাহ একেবারে বন্ধ করা হচ্ছে না। সরবরাহ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’
এদিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিনমাসের জন্য গ্রাহকদের বিল পরিশোধে কোনো বিলম্ব মাশুল না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াসা। সাধারণ ছুটি বাড়লে জুনের পরও মাশুল না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল্লাহ।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ বাসায় বন্দি হয়ে আছে। তারা বিল কিভাবে দেবে? বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়াও তো অমানবিক হবে। সেজন্য আমরা জুন পর্যন্ত বিলম্ব ফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্য সাংবাদিক মহসীন কাজী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের গ্রাহকদেরও পানি ব্যবহারে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। কোনোভাবেই পানির অপচয় করা যাবে না। সবাই সম্মিলিতভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করলে এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে দেখছি- করোনা সংকট সৃষ্টির পর থেকেই পানির সংকট চলছে। আগেও সংকট ছিল, কিন্তু এখন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সেটা আরও বেড়েছে। ওয়াসা যেটা ঘাটতির কথা বলছে, তাদের হিসেবের সঙ্গে আমাদের হিসেবের তফাৎ আছে। ওয়াসা উৎপাদন, সরবরাহ আর ঘাটতির কথা যেভাবে বলে এর কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।’
নাজের হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে ওয়াসার প্রচুর অবৈধ সংযোগ আছে। সেগুলো জায়েজ করার জন্য ঘাটতি বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। না হলে, অনেক মানুষ তো শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। তাহলে এত চাহিদা বাড়ার কারণ কী?’ সিস্টেম লস জায়েজ করতে ওয়াসা গ্রাহকদের ওপর দায় চাপাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়াসা করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস ঘরবন্দি মানুষ ঘাটতি চট্টগ্রাম পানির ঘাটতি