Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের লক্ষ্য দুর্ভিক্ষ-মন্দা থেকে দেশকে বাঁচানো: প্রধানমন্ত্রী


২০ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৪৩

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী আজকে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। যার ফলে হয়ত দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, সেখান থেকে আমাদের দেশকে বাঁচানো এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সোমবার (২০ এপ্রিল) গণভবনে দেশব্যাপী করোনাভাইরাস মোকাবিলার কার্যক্রম সমন্বয় করার লক্ষ্যে ভিডিও কনফারেন্সের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে, বিভিন্ন সময় চার দফায় ৪৩টি জেলায় জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন তিনি।

করোনাভাইরাসের মহামারীর চলমান পরিস্থিতে খাদ্য সরবরাহে কোনো অসুবিধা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে, আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে অন্য যা প্রয়োজন-তরিতরকারি, ফলমূল যে যা পারবেন উৎপাদন করবেন- আমরা সেটাই চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার উপরে এরইমধ্যে আমরা প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। আমরা কেন করেছি এটা। এইজন্য করেছি যে, আমাদের অর্থনীতিটাকে সচল রাখার জন্য। আমরা অনেক বড় বড় মেগা প্রজেক্ট নিয়েছিলাম বা বাজেটে অনেক টাকা নিয়েছিলাম। কিন্তু সেইগুলো আমরা অনেকটায় বাদ দিয়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ছোট-খাট কাজ করে যারা খেতে পারে বা ছোট খাট ব্যবসা যারা করেন, তারা যেন সেই ব্যবসাগুলো চালু রাখতে পারেন। তার জন্য আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছি। যা জিডিপির তিন দশমিক তিন শতাংশ এবং কৃষি খাতে আরও বেশি।’

বিজ্ঞাপন

‘কারণ মাত্র চার শতাংশ ইন্টারেস্টে আমরা কৃষির ঋণ দিচ্ছি। কৃষি মানে এটা শুধু ধান ফলা না, একেবারে মৎস্য পোট্রি থেকে শুরু করে ডেইরি থেকে বিভিন্ন ফল মূল ফুল যা যা চাষ করেন, সবকিছু মিলিয়েই এই প্যাকেজটা। কাজেই কোনো সেক্টর বাদ যাচ্ছে না। সব সেক্টরের জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি।’

‘কাজেই আমরা এটি চাই, আমাদের উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সেটাও কিন্তু আমাদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। সেখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বাজারে যেন কোনো জিনিসের অভাব না হয়। আর হাটও বসছে। সেখানে আমরা বলে দিয়েছি খোলা বড় জায়গায় যথাযথভাবে দূরত্ব রেখে বাজার বসবে, হাট বসবে। ক্রয় বিক্রয় হবে। যাতে মানুষের জীবনটা একেবারে স্থবির না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সামনে রোজা শুরু যাচ্ছে। আমি জানি এই রোজার সময়ও মানুষের যাতে কষ্ট না হয় ইতোমধ্যে আমরা ভিজিএফ, ভিজিডি বা টিআর কাবিখা এগুলি যেমন আমরা নিয়মিত দিয়ে থাকি বা সামাজিক সুরক্ষার যে অর্থ, বিধবা ভাতা, বয়স্কা ভাতা সেগুলি যেমন আমরা দিচ্ছি। তাছাড়া ১০টা কেজিতে ওএমএস চালু করেছি।

এছাড়াও ৫০ লাখ লোকের রেশন কার্ড আছে যারা চালটা কিনতে পারে এবং সেখানে আরও ৫০ লাখ পরিবারের জন্য আমরা কার্ড করে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘যারা কিছু পাচ্ছেন না বা যারা হাত পাততেও পাচ্ছেন না। কারো কাছে চাইতেও পাচ্ছেন না। তাদের জন্য আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। তাতে আমরা হিসাব করে দেখেছি প্রায় ৫ কোটি মানুষ অর্থাৎ একটা পরিবারকে যদি চার সদস্য বা পাচজন হিসাবে ধরি তাহলে ৫ কোটি মানুষই কিন্তু এই উপকার পাবে। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষ যেন অন্তত খাদ্য পায় এবং রমনা মাসে আরও বিশেষভাবে খাদ্য ব্যবস্থা যাতে হয় আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।’

‘আমরা এরইমধ্যে ধান সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়েছি। সাধারণত বোরেতে আমরা যা আগে নিতাম তার থেকে অনেক বেশি এখন নিচ্ছি। এখন আমরা প্রায় ৮লাখ মেট্রিক টন ধান, দশ লাখ মেট্রিক টন চাল দুই লাখ ২০হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমরা সংগ্রহ করব। এটা আমরা ক্রয় করব। সরকার ক্রয় করে রাখব। তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোনো অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাবার সহযোগিতা দিতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর আমরা যে প্রণোদনা দিয়েছি এটা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর আমাদের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এটা আমরা অব্যাহত রাখবো। যাতে আমাদের দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায় বা বিশ্বব্যাপী যেটা আজকে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে করোনাভাইরাস যার ফলে হয়ত দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, সেখান থেকে আমাদের দেশকে বাঁচানো এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। এটিই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

আমি এইটুকু অনুরোধ করবো সবাইকে, আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রিতিনিধির বক্তব্য শোনেন এবং দিক-নির্দেশনা দেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এ ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসকদের কার্যালয় ছাড়াও মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রান্তে যুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহসহ অন্যরা।

করোনাভাইরাস প্রধানমন্ত্রী ভিডিও ভিডিও কনফারেন্স শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর