Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলাদা হাসপাতাল নয়, সরকারি অবকাঠামো কাজে লাগাতে হবে


২০ এপ্রিল ২০২০ ২১:৪২

ঢাকা: দিন যত যাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-২৯) কারণে সৃষ্ট মহামারি ততই জটিল আকার ধারণ করেছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি এখন মানুষের ওপর চরম দাপট দেখাচ্ছে। ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনও এর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তাই খুব শিগগিরই এর কবল থেকে মুক্ত হওয়া যাবে- এমনটা আশা করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী চললেও এটা যে খুব একটা কাজে আসছে, তা ‍কিন্তু নয়।

বিজ্ঞাপন

সরকার এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল ঠিক করেছে। এমনকি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়। করোনা প্রতিরোধে সরকারি পর্যায়ের অবকাঠামো বা হাসপাতাল বা যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, সেগুলোকেই কাজে লাগাতে হবে। করোনা চিৎিসার জন্য আলাদা অবকাঠামো বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা কোনো সমাধান না। সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে সবকিছুতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এনে সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করতে হবে। তাই ভাইরাসটি প্রতিরোধে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। সমন্বিত পরিকল্পনাগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যায়ে ভাগ করে বাস্তবায়নে যেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আর পড়ুন: দেহে দেহে দুর্গ গড়তে হবে, অ্যান্টিবডি-প্লাজমায় জোর দিতে হবে

করোনা মোকাবিলা বা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের দফতর ‘ন্যাশনাল প্রিপারেনডেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান ফর কোভিড-১৯, বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশব্যাপী মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ও প্যারামেডিকেল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৩৯টি চিকিৎসা সংক্রান্ত উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে; যার মধ্যে ৭টি অটোনমাস এবং ১০টি বেসরকারি। ১০৫টি মেডিকেল কলেজ আছে, যার মধ্যে ৬৯টি বেসরকারি। ৬০টি নার্সিং কলেজ আছে, যার মধ্যে ৪৫টি বেসরকারি। ১৮৩টি নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে, যার মধ্যে ১৪০টি বেসরকারি। ২০৯টি মেডিকেল অ্যাসিটেন্ট প্রশিক্ষণ স্কুল আছে, যার মধ্যে ২০০টি বেসরকারি। ১০৮টি হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট আছে, যার মধ্যে ৯৭টি বেসরকারি। ৩৫টি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট আছে, যার মধ্যে ২৬টি বেসরকারি। এ ছাড়া ৬টি আর্ম ফোর্সেস এবং আর্মি মেডিকেল কলেজ রয়েছে।

দেশব্যাপী হাসপাতালের সংখ্যা নিয়ে সরকারি তথ্য এবং চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় দেশব্যাপী যে অবকাঠামো ঠিক করা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই কাজে আসছে না। উল্টো ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সংকটময় মুহূর্তে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে করোনা চিকিৎসায় বেসরকারি উদ্যোগে আলাদা হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সমাজ-সংস্কৃতি সংগঠক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে একটি এক্সিট প্লান বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এক্সিট প্ল্যানের প্রথম ধাক্কা হবে যে, আগে যারা অসুস্থ হচ্ছে তাদেরকে কীভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে সেটা ঠিক করা। এজন্য আমরা যে আলাদা কোভিড হাসপাতাল করছি সেটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এই আলাদা হাসপাতাল করার মডেলটা আমরা নিয়েছি চীন থেকে। চীনের সংস্কৃতিতে আদেশ বা কমান্ড মানার চর্চা রয়েছে। তাই চীনের জন্য এই মডেল শতভাগ ঠিক ছিল। আমাদের সংস্কৃতিতে কিন্তু আদেশ বা কমান্ড মানার চর্চা পুরোপুরি নেই, যে কারণে সাময়িক ছুটি বা লকডাউন পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। আমাদের হাসপাতালগুলোতে ফরমাল সম্পর্ক থেকে ইনফরমাল সম্পর্ক বেশি কাজ করে।’

আর পড়ুন: লকডাউন নয়, সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি

অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির কারণে নতুন প্রতিষ্ঠানে টিমওয়ার্ক গড়তে অনেক সময় লেগে যায়। তাই চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আমাদের আলাদা হাসপাতালের পরিকল্পনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এবং সরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রকৃত কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে দেশব্যাপী আমাদের যে সরকারি জেনারেল হাসপাতাল বা চিকিৎসা অবকাঠামো রয়েছে বর্তমানে সেগুলোর ৬০ থেকে ৭০ ভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাই এগুলোকেই জেনারেল মেজর হাসপাতালে পরিণত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই বলছেন যে, সাধারণ হাসপাতালে কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিলে বাকি রোগীদের সমস্যা হবে। এটি কিন্তু ভুল ধারণা। কেননা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার (আর্কিটেকচার) বিষয়ে সঠিক পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি ফলো করলে সব হাসপাতালেই করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। হাসপাতালে পজিটিভ রোগী পাওয়া গেলে তার জন্য কোয়ারেনটাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে আলাদা রেড জোনে রাখতে হবে। আবার হাসপাতাল থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে সেটারও ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা আমাদের হাসপাতালে এগুলো মানা হয় না। সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থাপনা না থাকায় ভালো মানুষ হাসপাতালে গেলে রোগী হয়ে বাসায় ফেরে। তাই এই সুযোগে সবগুলো হাসপাতালে সংক্রমণরোধ সিস্টেম বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই কাজটা করতে পারলে কোভিডসহ অন্য ভাইরাস মোকাবিলায় আমরা অনেক বেশি এগিয়ে থাকব।’

ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে আলাদা হাসপাতাল নেই। কিন্তু সেখানে আইসোলেশন জোন করা হয়েছে। সংক্রমণ রোধ করে কীভাবে আইসোলেশন জোন, রেড জোন করতে হবে এগুলোর জন্য পদ্ধতি রয়েছে। যা ফলো করলে সম্ভব। কোভিড রোগীর জন্য আলাদা হাসপাতাল সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালগুলোকে কার্যকর হাসপাতালে রূপান্তর করা।’ শতভাগ সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করলে এটা সম্ভব বলে মনে করেন এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী।

অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি আলাদা করোনাভাইরাস চিকিৎসা সরকারি অবকাঠামো হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর