ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে
২১ এপ্রিল ২০২০ ২২:১০
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে গোটা পৃথিবী এখন লণ্ডভণ্ড হওয়ার পথে। এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতিসহ জীবনযাত্রা থমকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন দুর্যোগ মোকাবিলা করে জীবনযাত্রাকে সহজ করতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি। এই পরিকল্পনাকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা ফ্রন্টলাইন বা সম্মুখ সারিতে কাজ করছেন, সবার আগে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সেবায় বা এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করছেন, তাদের সুরক্ষার বিষয়টি বলতে গেলে এখনো উপক্ষিত। যে কারণে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ যারা সরকারের মাঠ পর্যায়ে (প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা) কাজ করছেন, তাদের একটি বড় অংশ এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ফ্রন্টলাইন কর্মীদের মৃত্যুর খবরও শুনতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন- আলাদা হাসপাতাল নয়, সরকারি অবকাঠামো কাজে লাগাতে হবে
অন্যদিকে, এই ফ্রন্টলাইন কর্মীদের পূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে অনেকেই এই যুদ্ধে এগিয়েও আসছেন না। এতে করে সাধারণ মানুষের পক্ষে চলমান সময়ে ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে থাকা এই যোদ্ধাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়ছে হচ্ছে সাংস্কৃতিক কারণেও। করোনার এই সাধারণ ছুটিতেও চিকিৎসকসহ যারা জরুরি সেবায় নিয়োজিত, তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন অনেকেই। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস নিয়ে ট্যাবুর কারণে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলেও সে তথ্য গোপন করে অনেকেই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসকরা একদিকে যেমন সামাজিক নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে থাকছেন আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকায় তাদের এই ঝুঁকি বেড়ে হচ্ছে কয়েকগুণ।
আরও পড়ুন- দেহে দেহে দুর্গ গড়তে হবে, অ্যান্টিবডি-প্লাজমায় জোর দিতে হবে
চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও সমাজ-সংস্কৃতি সংগঠক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে চিকিৎসকসহ যারা ফ্রন্টলাইনে কাজ করছেন, তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সবার আগে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেননা এই যোদ্ধারা সরাসরি করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। তাদের নিরাপত্তাই যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে তারা যুদ্ধ করবেন কীভাবে? আর তারা যদি যুদ্ধ নাই করতে পারেন, তাহলে আমরাই বা কিভাবে রক্ষা পাব? আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এই বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমলে নেওয়া প্রয়োজন।’
সংগঠক অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি বলেন, ‘যেসব চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকবেন, তাদের যার যেমন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে পারসোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) বা শতভাগ সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে হবে। এই ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য আলাদা বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাই প্রতিটি বিভাগে চিকিৎসকদের জন্য বা এই যোদ্ধাদের জন্য ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ বিশেষ হাসপাতাল নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন- লকডাউন নয়, সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি
ডা. লিয়াকত মনে করেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে ‘রিজার্ভড ফর কোভিড-১৯’ না বলে ‘রিজার্ভড ফর ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার’ ঘোষণা করা উচিত। অর্থাৎ যারা ঝুঁকি নিয়ে সামনের সারিতে কাজ করছেন, তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এই হাসপাতাল বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকলে জেনারেল হাসপাতালে যে ধরনের রোগীই আসুক না কেন, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা কিন্তু সেবা দিতে সাহস ও উৎসাহ পাবেন।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত বলে মত ডা. লিয়াকতের। তিনি বলেন, ‘একজন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়, তবে তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের জন্য ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছেন। সেটা সাধুবাদ পাওয়ার বিষয়। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, টাকাটাই মুখ্য নয়, মুখ্য হলো সামাজিক মর্যাদা। একজন চিকিৎসক যেন সামাজিকভাবে সম্মান পান, তিনি যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িওয়ালা যেন তার সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ না করেন— এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। আর এই সামাজিক সম্মান তখনই নিশ্চিত হয় যখন রাষ্ট্র কাউকে বিশেষ মর্যাদা বা পদক দেয়। তাই রাষ্ট্রের ঘোষণা করা উচিত যে চিকিৎসকরা হচ্ছেন বীর। রাষ্ট্র যখন চিকিৎসক বা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের সমীহের চোখে দেখবে, তখন সমাজের মানুষরাও তাদের সমীহ করবে। তাই তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং সামজিক সম্মান নিশ্চিত করতে হবে।’
করোনাভাইরাস করোনাভাইরাস মোকাবিলা করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা কোভিড-১৯ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসকদের জন্য বিশেষায়িত ব্যবস্থা ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা