শিশু ধর্ষণের চেষ্টা, শাস্তি ‘কানে ধরে ৩ চড়’
২২ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী এক যুবককে পুলিশে সোপর্দ্দ না করে ‘তিনবার চড় দিয়ে ও কানে ধরিয়ে’ ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনার পাঁচদিন পর অভিযুক্ত যুবককে আটক করেছে।
অভিযুক্ত যুবক স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের ভাতিজা হওয়ায় এই জনপ্রতিনিধি তাকে গুরুতর এই অপরাধ থেকে পার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ ওই শিশুর মায়ের।
আটক ফারুকুল ইসলাম রিমন (২০) ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার দাঁতমারা ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদারখীল গ্রামের মনা ড্রাইভারের ছেলে। রিমন গ্রামে পণ্য পরিবহনকারী মহেন্দ্র গাড়ি চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার শিকার শিশুটির বাড়িও একই ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদারখীল গ্রামের মধ্যমপাড়া এলাকায়। শিশুটির মা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে প্রতিবেশি রিমন শিশুটিকে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই শিশু চিৎকার দেয়। তখন রিমন তাকে সেখানে থাকা একটি গাড়ির টায়ারের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শিশুটি কোনোমতে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে বাড়ি গিয়ে মাকে ঘটনা খুলে বলে। মা-বাবা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. নবী সর্দারকে জানান।
শিশুটির মা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরদিন (শনিবার) সালিশ বসে। আমরা ভেবেছিলাম, রিমনকে পুলিশে দেওয়া হবে। কিন্তু মেম্বার তাকে তিনটা থাপ্পড় মেরেছে আর কান ধরিয়েছে। এরপর মাফ চাইয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। মেম্বার নিজের ভাতিজা বলে বিচার করেনি। এরপর থেকে রিমন আমাকে ও আমার মেয়কে বারবার দেখে নেবে বলে হুমকি দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি।’
জানতে চাইলে হেঁয়াকো ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নবী সর্দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সালিশে আমি একা ছিলাম না। দাঁতমারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদিন এবং সাবেক ইউপি মেম্বার পেয়ার আহমেদও ছিলেন। রিমন আমার ভাতিজা। সেজন্য আমি সালিশে বলেছি, আমি কোনো বিচার করব না। জয়নাল আবেদিন সাহেব ও পেয়ার সাহেব যে বিচার করেন সেটা মেনে নেব। এরপর তাকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে, কানে ধরানো হয়েছে। মেয়েটির বাবার কাছে গিয়ে মাফও চেয়েছে। সালিশে উপস্থিত সবাই বিচার মেনে নিয়েছেন।’
অপরাধীকে থানায় হস্তান্তর করা হয়নি কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল কি না, সেটা ক্লিয়ার না। শুধু মেয়েটিকে কেন চিপস কিনে দেবে বলে নিজের সঙ্গে নিয়ে গেল, এই নেওয়াটাকেই অন্যায় ধরে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে যা হচ্ছে তা গ্রাম্য রাজনীতি। একপক্ষ মেয়েটির মাকে উসকানি দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পাঠিয়েছে।’
এদিকে বুধবার (২২ এপ্রিল) সকালে রিমনকে তার বাড়ির পাশে একটি বাজার থেকে আটক করে ভুজপুর থানার দাঁতমারা তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা। শিশুটির মা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
দাঁতমারা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক সরওয়ার্দ্দী সরোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণের চেষ্টার মৌখিক অভিযোগ পেয়েই আমরা গাড়িচালক রিমনকে আটক করেছি। মেয়েটির মা অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। মামলা হলে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।’
জনপ্রতিনিধির সালিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানি না। তবে ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের চেষ্টার কোনো ঘটনার বিচার করার এখতিয়ার চেয়ারম্যান-মেম্বারের নেই।’