Friday 17 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মদ্যপ’র গাড়িচাপায় হত, ৫০হাজারে রফা, সাংবাদিকের কাছে ইজ্জত দাবি


২ মার্চ ২০১৮ ১৫:৪৬ | আপডেট: ৪ মার্চ ২০১৮ ১৫:২০

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এরশাদপন্থী জাতীয় পার্টির নেতা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সোলায়মান আলম শেঠের ছেলের প্রাইভেটকারের ধাক্কায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। গাড়ি চালানোর সময় এ নেতার ছেলে উমায়ের আলম শেঠ (২২) মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দুর্ঘটনার পর ছেলেকে মামলা থেকে বাঁচাতে সোলায়মান আলম শেঠ প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করেন, যাতে মধ্যস্থতা করেছেন নগরীর হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (০১ মার্চ) রাতে নগরীর হালিশহর থানার টোলরোডে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সোলায়মান আলম শেঠের ছেলের গাড়ির ধাক্কায় একজন নিহতের তথ্য স্বীকার করেছেন ওসি। নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতায় মধ্যস্থতা করার তথ্যও স্বীকার করেছেন তিনি।

ওসি সারাবাংলাকে বলেন, উনি (শেঠ) এসেছিলেন। উনাকে খুব মর্মাহত মনে হয়েছে। আমাকে দায়িত্ব দিয়ে বলেছেন, নিহতের পরিবারের জন্য যা যা করা দরকার তিনি করবেন। প্রাথমিকভাবে আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নিহতের পরিবারকে দিয়েছি। পরে তারা আর মামলা করেনি।

ঘটনাস্থলে যাওয়া হালিশহর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মাহবুব মোর্শেদ সারাবাংলাকে জানান, টোল রোডে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি গিয়ে দেখেন, একটি প্রাইভেটকার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এর পাশেই একজনের মরদেহ পড়ে আছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে জানিয়েছেন, প্রাইভেট কারে চার যুবক ছিলেন। দুর্ঘটনায় তারাও সামান্য আহত হন। তাদের দ্রুত আরেকটি গাড়িতে করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

তিনি বলেন, সেখানে প্রায় ২০০ লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল। কয়েকজন আমাকে জানিয়েছেন, তারা কারের ভেতর মদের  বোতল দেখেছেন। তবে আমি পাইনি। কারে যারা ছিল তাদের দ্রুত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রাইভেটকারের যাত্রীদের খুঁজে নিয়ে কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে জানান এসআই মাহবুব। তিনি বলেন, যেহেতু মামলা হয়নি এটার তো আর তদন্ত হবে না।

তিনি জানান, নিহত যুবক মো.মানিক (২৫) পেশায় একজন ভ্যানগাড়ি চালক। তাদের বাড়ি বগুড়া। হালিশহরের চৌধুরীপাড়ায় স্ত্রী নিয়ে মানিক ভাড়া থাকতেন।

মানিকের মরদেহ বগুড়া নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বাবদ ২২ হাজার টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মোট ৫০ হাজার টাকা নিহতের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মরদেহের সুরতহাল হলেও মানিকের স্ত্রীর সম্মতিতে ময়নাতদন্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।

এদিকে প্রাইভেটকারটি উমায়ের চালাচ্ছিল বলে স্বীকার করলেও ওসি বলেছেন, উমায়ের মদ্যপ ছিলেন কি না তিনি জানেন না। ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা বলেও মন্তব্য করেন ওসি।

দুর্ঘটনার পর মামলা করা হল না কেন, জানতে চাইলে ওসি বলেন, যেহেতু দুই ফ্যামিলির মধ্যে একটা সমঝোতা করে দিয়েছি, তাদের সম্মতিতেই মামলা হয়নি।

উমায়ের আলম শেঠ নগরীর বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ অনুষদের ছাত্র।

জানতে চাইলে সোলায়মান আলম শেঠ সারাবাংলাকে বলেন, আমার ছেলেসহ ওরা চার বন্ধু প্রাইভেট কারে করে আসছিল। চালক আমার ছেলে ছিল না। চালক আরেকজন ছিল। ব্রেক ফেল করায় একটি দুর্ঘটনা হয়েছে। আমি মানবিক কারণে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি।

ছেলে মদ্যপ অবস্থায় ছিল না বলে দাবি করে শেঠ বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক। আপনারা ইজ্জত দিতেও পারেন, নিতেও পারেন। আমার অবস্থাটা একটু বুঝেশুনে লিখবেন আর কি।’

ছেলে আহত হয়েছেন বলে জানালেও কোথায় চিকিৎসাধীন আছেন সেটা বলতে রাজি হননি শেঠ।

বিজ্ঞাপন

সোলায়মান আলম শেঠ জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য। সাম্প্রতিক সময়ে শেঠকে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হিসেবেও ঘোষণা দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর