নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজি হলে কঠোর ব্যবস্থা- বাণিজ্যমন্ত্রী
২৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৯
ঢাকা: একদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশজুড়ে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি, অন্যদিকে শুরু হচ্ছে রোজা— এই দুই বিষয়কে পুঁজি করে কোন ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের মজুদ কিংবা মূল্যবৃদ্ধি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ সকল পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। মজুদের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বেশি। কোন পণ্যের ঘাটতি হবার সম্ভাবনা বা কারণ নেই। কৃত্রিম উপায়ে কোন পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরো বলেন, পবিত্র রমজান মাসের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ আগে থেকেই বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদার তুলনার অধিকপণ্য উৎপাদন করেছে। আমদানিযোগ্য পণ্য অনেক আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু পণ্য পরিবহন এবং আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাসে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন পণ্যের-ই সংকট নেই এবং মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা বা কারণ নেই। সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সকল পণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গঠিত টাস্কফোর্স এবং বিভিন্ন কমিটিকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আজ (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে এবং বর্তমান কোভডি-১৯ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেও উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় এবার পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিক্রয় করছে। টিসিবি’র মাধ্যমে বিগত যেকোন বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। টিসিবি’র নিয়োগ প্রাপ্ত প্রায় তিন হাজার ডিলার এসকল পণ্য ট্রাক সেলে বিক্রয় করছে। ইতোমধ্যে পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম ধরা পড়ছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে সারাদেশে ৯০টি বাজার মনিটরিং টিম নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া টিসিবি’র কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ঢাকাতে ৮টি এবং ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান জোরদার করেছে। কোন সমস্যা হবেনা বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
বৈঠকে সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও আসন্ন রমজানে খাদ্য সামগ্রী পরিবহনে যেন কোন সমস্যা না হয় সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে। টিসিবি’র ট্রাকসেল পুনঃবিন্যাস করার বিষয় বিবেচনা করা হবে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হবে।
চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরে সৃষ্ট কনটেইনারজট নিরসনে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রেখে, প্রয়োজনে জরুরী পণ্য খালাসের জন্য আমদানিকারকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রতিদিনের বাজার দর সিটি করপোরেশনকে সরবরাহ করার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা, জেলা প্রশাসন ঢাকা রমজান উপলক্ষ্যে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিচালিত টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় স্থান সমুহে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সারা দেশে পাইকারি বাজার চালু করার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর তাদের অভিযান আরও জোরদার করবে পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাণিজ্য সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অব্যাহত থাকবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশের বাজারে এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ ওষধ সামগ্রী বিকল্প বাজার সন্ধানে এখন থেকেই আমদানি কারকরা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। টিসিবি সারা বছরব্যাপী তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় গঠিত টাস্কফোর্স আরও জোরদারভাবে কাজ করবে।