Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহানগর হাসপাতালে পিপিই কে দিয়েছেন জানেন না পরিচালক


২৫ এপ্রিল ২০২০ ১৩:২৪

ঢাকা: সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচনায় আসা ঢাকা মহানগর হাসপাতালের মাস্ক, গ্লাভস বা শু কাভার কে দিয়েছেন তা জানা নেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায়ের। তবে কেন্দ্রীয় ওষধাগার (সিএমএসডি) থেকে এসব নিরাপত্তা সামগ্রী দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো আসলে কারা দিয়েছে তা জানার জন্য তদন্ত চলছে।’

হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে এ সব কথা বলেন।

হাসপাতালে কীভাবে এলো এই ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মহানগর হাসপাতাল দক্ষিণ সিটি করপোরশনের আওতাধীন একটি হাসপাতাল। এখানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের আগে হাসপাতালের বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হতো। তবে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালের নাম ঘোষণার পরে এখানে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকেই আমরা সকল কিছু পেয়ে আসছি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকেই আমরা সকল নিরাপত্তা সামগ্রী পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা সামগ্রীর সংকট ছিল। আমরা কোনোভাবে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলাম। সিটি করপোরেশন থেকে কিছু গ্লাভস পেয়েছিলাম যেগুলো পাতলা ছিল। আবার সিএমএসডি থেকেও গ্লাভস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে গ্লাভসগুলো আলোচনায় এসেছে তা সিএমএসডি বা সিটি করপোরেশনের গ্লাভসের সঙ্গে মিল নেই। কারা দিয়েছে তা এখন সঠিকভাবে বলতেও পারছি না। এটি নিয়ে তদন্ত চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শু কভারও সংকট ছিল। আর তাই আমরা কোনোভাবে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলাম। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে পলিথিন দিয়ে পা বেঁধে এখানে শুধু একদিন চিকিৎসকরা কাজ করেছে উপায় না পেয়ে। এই পাতলা গ্লাভসগুলো সম্ভবত আমরা সিটি করপোরেশন থেকে পেয়েছি। এখনও সেটিই দিচ্ছি। তবে সেগুলোই আলোচনায় আসা গ্লাভস কিনা তা বুঝতে পারছি না। তদন্ত কমিটিও এগুলো দেখেছে। সেখানে আলোচনায় আসা গ্লাভসের সঙ্গে আমাদের বাস্তবের গ্লাভস মিলছে না।’

বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান কী নিরাপত্তা সামগ্রী দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক প্রতিষ্ঠানই আমাদের নিরাপত্তাসামগ্রী দিয়েছে। সেখানে এই ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী ছিল না কিনা তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

নিরাপত্তা সামগ্রীর একটা চালান প্রথম দিকে মিটফোর্ড থেকেও দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে ডা. প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘তারা এখন আর দিচ্ছে না। তবে সিটি করপোরেশন থেকে আগে একবার দেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তা সামগ্রী। গতদিনও সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া হয়েছে। তারা সীমিত আকারে কিছু ভিনায়েল গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই দিয়ে থাকে। তবে আলোচনায় আসা সেগুলোর সঙ্গে আমার কাছে থাকা নিরাপত্তা সামগ্রীর সঙ্গে হুবহু মিলছে না। তাই এটা কে বা কারা এটা কিভাবে পেলো তা বুঝতে পারছি না। আবার সিএমএসডি থেকে যা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর সঙ্গেও মিলে না এ বিষয় নিয়ে তাই মন্ত্রণালয় থেকেই তদন্ত চলছে।’

কারা সেই নিরাপত্তা সামগ্রী দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা এখন আসলে সঠিকভাবে বলতে পারছি না। অনেকেই দিয়েছে।’ তবে তদন্ত চলছে, আশা করি খুব দ্রুতই জানা যাবে বলে জানান ডা. প্রকাশ চন্দ্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর হাসপাতালের এক চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৩ এপ্রিল আমরা সেই নিরাপত্তা সামগ্রী পরি। এগুলো আমাদেরকে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য দেওয়া হয়েছে সিএমএসডির মাধ্যমে। এ ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী আসলে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।’

এদিকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) পরিচালক (ভান্ডার ও সরবরাহ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহানগর হাসপাতালে আমাদের এমন নিম্নমানের কোনো নিরাপত্তাসামগ্রী পৌঁছায়নি। সেই হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও জানিয়েছেন আলোচনায় আসা নিরাপত্তা সামগ্রী সিএমএসডি থেকে দেওয়া হয়নি। সিএমএসডি থেকে যা দেওয়া হয়েছে তা আমাদের কাছে চালান আকারেই আছে। মহানগর হাসপাতালের পরিচালককেও তা বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাউকে কোনো নিরাপত্তা সামগ্রী দিয়ে থাকে সেটার দায় সিএমএসডি তো নিতে পারে না। আর সবচাইতে বড় কথা এখন চিকিৎসকদের সুরক্ষা জন্য আমরা যেখানে চেষ্টা করে যাচ্ছি সেখানে আসলে মানহীন পণ্য সেই চেষ্টাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। যেহেতু তদন্ত চলছে আশা করি সত্যি বিষয়টাই উদঘাটন হয়ে আসবে।’

ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘মহানগর হাসপাতালে একটি গ্লোভস সংক্রান্ত একটি বিষয়ে পরিষ্কার করেছিলাম যে, গ্লোভসটা প্রেরণ করা হয়েছে সেটি সিএমএসডির দেওয়া গ্লোভস না। এখনও দেখা যাচ্ছে যে কিছু সংবাদ মাধ্যমে পাতলা গ্লোভস পরিহিত এবং ফুট কভার পরিহিত ছবি দিয়ে কিছু বিভ্রান্তিমূলক ছবি প্রেরণ করা হচ্ছে। আমরা মহানগর হাসপাতাল থেকে একটা স্যাম্পল নিয়েছি যেটা একটা পাতলা ভিনাইল গ্লোভস। সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেখানে দান করছে। এটি কোনোভাবেই আমরা সিএমএসডি থেকে প্রেরণ করছি না। এ থেকেও অনেক পাতলা অনেক পলিথিনযুক্ত মাস্ক ব্যবহার করে ছবি তুলে বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়াতে পরিবেশন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যেটা সিএমএসডি থেকে আমরা প্রেরণ করছি সেটা হলো ল্যাটিকস গ্লোভস যেটা হাতের সঙ্গে মিশে থাকে। যেটাকে আমরা সার্জিক্যাল এক্সামিনেশন গ্লোভস বলি। এটাই আমরা পাঠাচ্ছি। এ দুটি যদি আপনারা মিলিয়ে দেখেন তবে এগুলোর মান কিন্তু এক না। যে ছবিগুলো আমরা দেখেছি তা অনেক পাতলা। তাই একটা বিষয় আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, আমরা যা পাঠাচ্ছি তার মান যথাযথভাবে আমাদের কারিগরি কমিটি এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কারিগরি কমিটি কর্তৃক পরীক্ষা করে প্রেরণ করা হচ্ছে।’

মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘উদ্বেগের সঙ্গেই বলতে চাচ্ছি দেশের বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালের পরিচালক বৃন্দ সিএমএসডির বাইরেও বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী গ্রহন করে থাকেন। সেগুলো ব্যবহার উপযোগী কিনা তার মান যাচাই করে নেওয়ার জন্য। তাদের অধীনস্ত চিকিৎসকদের অবহিত করে যেন সেগুলো ব্যবহার করা হয়।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে নিরাপত্তা সামগ্রী দেওয়া হয়ে থাকে। মহানগর হাসপাতালের পরিচালকের এমন বক্তব্যের পরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বিএসপির মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

করোনাভাইরাস মোকাবিলা ঢাকা সিটি করপোরেশনি পিপিই মহানগর হাসপাতাল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর