বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাখাতে ৩৯০ কোটি টাকা প্রণোদনা দাবি
২৫ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৩০
ঢাকা: করোনাভাইরাসে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলায় ৩৯০ কোটি টাকার প্রণোদনা চেয়েছেন বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা খাতের উদ্যোক্তারা।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ আবেদন করেন বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)’।
টেকবিডির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে ‘কারিগরি ইনস্টিটিউট প্রণোদনা প্যাকেজ’ চেয়ে এ আবেদন করা হয়।
টেকবিডির আবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ১০ হাজার ৪৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ৯ হাজার ৭৫৯টি, যেখানে সরকারি সংখ্যা মাত্র ৬৯৩।
এসব শিক্ষাক্রমে ২০১৮-১৯ সেশন রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২১ হাজার ৭৯ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১৪ হাজার ২৯৪ জন, অর্থাৎ ৩০ ভাগ নারী শিক্ষার্থী। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাধ্যমিক স্তরে এনরোলমেন্ট বর্তমানে ১৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। সরকারি নীতি ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির আলোকে পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বছরের মধ্যেই এনরোলমেন্ট ২০ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই দশকে যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকবে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
আবেদনে বলা হয়, বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহ বেতন-ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো অনুদান বা আর্থিক সহযোগিতা পায় না। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ১৭ মার্চ থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই অর্থনৈতিকভাবে বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানসমূহের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিরা নাজুক অবস্থার শিকার বলেও এই আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
করোনার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন সেক্টর ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক প্রণোদনা এবং সহযোগিতার প্রশংসা করে বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৯০ কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ বছর মেয়াদি (প্রথম বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করে ) ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কারণে অর্থনৈতিক দুর্বলতার শিকার। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন দিয়েই প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাড়া, সব ইউটিলিটি বিল এবং শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সত্ত্বেও দুর্যোগকালীন সময়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি-সহ অন্যান্য পাওনা আদায় করছে না। এতে করে সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক মহাসংকটে পড়েছে এবং যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বেতন-ভাতার ওপর।
জানতে চাইলে টেকবিডির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ বলেন, শিক্ষার অগ্রাধিকার খাতের অন্যতম কারিগরি শিক্ষা। সমৃদ্ধ দেশ গড়তে কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমরা অন্যান্য খাতের মতো প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি। আশা করছি, তিনি আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা খাতকে বাঁচাবেন।