Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে ‘করোনার নিয়মে’


২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২০

ঢাকা: কিছুদিন আগেও লোহা-লক্কড়ের শব্দে মুখর থাকতো কারখানাটি। লালবাগের এই লেদ ফ্যাক্টরিতে কঠিন ধাতুর সঙ্গে মিলেমিশে ছিল কোমল জীবন। মালিক এটিকে ব্যবসা না বলে ‍সুখের সংসার হিসেবেই দেখতেন। মার্চের শুরুতে দারুণ ব্যবসাও হয়েছিল তার। ওই সময়ও সেখানে কাজ করতেন ১০ জন কারিগর। কিন্তু মার্চের শেষ দিকে এসেই ওলট-পালট হয়ে গেলো সব। চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ল। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও থমকে গেলো এই ভাইরাসের কারণে। বন্ধ হয়ে গেল সাজ্জাদুল হক বাদশার লেদ ফ্যাক্টরিও!

বিজ্ঞাপন

২৫ মার্চ থেকে একরকম ঘরে বসেই পুরান ঢাকার এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ১০ কর্মচারিকেও পাঠিয়েছেন ছুটিতে। উৎপাদন নেই বলে বাতিল হয়ে গেছে অনেকগুলো অর্ডার। এর মধ্যে আবার লালবাগ এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা ভয়ও পাচ্ছেন তিনি। কারণ পরিবারে রয়েছে তার বৃদ্ধ মা-বাবা।

বাদশা বলেন, ‘লেদ ফ্যাক্টরিতে আয়-রোজগার বেশ ভালো। দশজন শ্রমিক নিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন সবই বন্ধ। তাই ঘরে শুয়ে-বসে আর টিভি দেখে সময় কাটছে। নামাজ পড়ছি আর দোয়া করছি- যেন এই দুঃসময় দ্রুত কেটে যায়।’

বাদশা জানান, অনেকগুলো অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এ সময় উৎপাদন ও বিক্রি না থাকলেও দোকান ভাড়া দিতে হচ্ছে ঠিকই। ফলে পুঁজিতে হাত পড়েছে তার। এজন্য সাংসারিক খরচও কমিয়ে দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।

তবে বাদশার আয় বন্ধ হয়ে গেলেও তার স্ত্রী কিন্তু মোটেও বসে নেই। আগে থেকেই নকশী কাঁথা সেলাই করতেন তিনি। লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় এখন সেলাইয়েও বেশি মনোযোগ দিতে পারছেন। প্রতি পাঁচ দিনে সেলাই করা যাচ্ছে দুটি কাঁথা। উদ্দেশ্য লকডাউনের শেষে আড়ংয়ে মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে সেগুলো বিক্রি করা। এছাড়াও ছাদ বাগানের মাধ্যমে পরিবারের দৈনন্দিন সবজি ও পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এই ব্যবসায়ী দম্পতি একরকম ঘরে বসে গেলেও, চকবাজার থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক আব্দুল খালেকের ক্ষেত্রে সেটি সম্পূর্ণ বিপরীত। করোনা সংক্রমণের এই সময় প্রতিদিন অফিস ডিউটি হিসেবে ঢাকেরশ্বরী, বকশিবাজার ও পলাশী এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়িতে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীও পৌঁছে দিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

আব্দুল খালেক বলেন, ‘রাষ্ট্রের এত বড় বিপদের সময় মানুষের পাশে কাজ করতে পারছি এটা আমার জন্য আনন্দের। আমার বউ-বাচ্চা ঢাকায় থাকেন, বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে। জানি এই সময়ে তাদের আমাকে প্রয়োজন; তবে তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন দেশের। এজন্য দেশকে সেবা করছি রাত-দিন। করোনা হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে; কিন্তু আমরা পুলিশবাহিনী এমনভাবে কাজ করছি যেন একজন মানুষও খেতে না পেয়ে মারা না যায়। লকডাউনের এই সময়ে অপরাধীচক্রগুলোকেও নজরদারিতে রাখতে হচ্ছে।’

পুলিশের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন অনেক গণমাধ্যমকর্মী, বিশেষ করে রিপোর্টাররা। তবে বেশিরভাগই সংবাদ কর্মীই ঘরে বসে কাজ করছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ও অন্তর্জালের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন সর্বশেষ সংবাদ। ঢাকার একটি ইংরেজি দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদক আসিফুর রহমান বলেন, ‘ঘরে বসেই সংবাদ সংগ্রহ করে, লিখে, অফিসে পাঠাতে হচ্ছে। কাজটি শুনতে যতটা সহজ, করতে অনেক বেশি কঠিন। কারণ সশরীরে যেতে না পারায় অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লেগে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা ছিল না। বাসায় সহকারী ছিলেন। সে না থাকলে হোটেলে খেয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু এখন তিন বেলা নিজেরেই খাবার তৈরি করতে হচ্ছে। এছাড়া বাজার করে, সবজি কেটে, হাড়ি-পাতিল ধুয়ে তারপর লিখতে বসতে হয়। ফলে কাজ করতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তারপরও নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে মানুষের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’

শিক্ষকরাও এখন অনেক কর্মজীবীর মতো ঘরে বসেই কাজ করছেন। প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কেউই বসে নেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকরা টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন ভিডিও কনফারেন্সে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও শিক্ষকদেরকে বন্ধ পরবর্তী সময়ের কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য কাজ করতে হচ্ছে।

গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকেশ সূত্রধর বলেন, ‘টেলিভিশনে শিশুরা ক্লাস করছে। আমরা আবার আমাদের বিদ্যালয় থেকে কিছু ক্লাস ভিডিও করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। আমরা গ্রামে থাকি বলে চাইলেই শিক্ষার্থীদের বাড়ি যেতে পারি। তাই সুরক্ষা-সরঞ্জাম পড়ে অনেকের বাড়ি গিয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে আসছি।’

মাসুম আহমদ নামে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘বারান্দা থেকে ঘর। ঘর থেকে আবার বারান্দা। যাওয়া আসা বলতে এইটুকুই। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখছি। প্রয়োজন হলে কোয়ারেনটাইনের নিয়ম মেনে তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টাও করি। এই সময়ে কারও পড়াশোনা যেন থেমে না যায় সেই চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৯৮ জন। এর মধ্যে ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ ঘটে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। এদিকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সাড়ে ২৮ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি মানুষ।

করোনা করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস শ্রমজীবী মানুষ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর