Saturday 19 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুয়েত মৈত্রী ও কুর্মিটোলায় নেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা


২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৫২

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত হওয়া করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আটটি সরকারি হাসপাতালের নাম ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা হাসপাতালে। তবে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকলেও এই দুই হাসপাতালে এখনো নেই কোনো কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই অবস্থায় যদি কোনো জটিল রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তবে সেক্ষেত্রে অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে চিকিৎসা দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকার বিষয়টি। এই হাসপাতালে সমস্যাগুলো নিয়ে সারাবাংলা ডট নেটে এর আগে দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে এলেও এখনো সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকায় এখানে রোগীদের অনেক সময়েই সময় মতো সেবা দেওয়া যাচ্ছে না বলেও জানা যায়।

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আছে সাপোর্টিং স্টাফেরও সংকট আছে। নার্স-ওয়ার্ড বয়, আয়া এমন স্টাফদের সংকট আছে। আর এক্ষেত্রে সেন্ট্রাল অক্সিজেন না থাকায় সিলিন্ডার টেনে নেওয়াও একটি সমস্যা। দেখা গেলো উপরের ফ্লোরে অক্সিজেন শেষ। সেই অবস্থায় সেটিকে রিপ্লেস করা দরকার জরুরিভাবে। আর সেটিকে কোনো একজন বহন করে নিয়ে যেতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে অক্সিজেন নিয়ে যাবে তারও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। দেখা গেলো সেই সময়েই কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও কিছুটা সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। আর এতে করে সেবার মান নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না রোগীরাও।

প্রায় একই অবস্থা জানা যায় কুর্মিটোলা হাসপাতালের ক্ষেত্রেও। এই হাসপাতালের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় বর্তমানে হাসপাতালে রোগী আছে তিন শতাধিক। যার মধ্যে আছে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় থাকা রোগীও। তবে হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে আসলে তিনভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমটা হয়ে থাকে মৃদু উপসর্গ থাকা রোগী যাদের আসলে হাসপাতালে আসার প্রয়োজন হয় না। দ্বিতীয়ত থাকে এমন রোগী যাদের উপসর্গ আছে ও একই সঙ্গে যাদের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে যে কোনো সময়েই। তৃতীয়ত আছে এমন রোগী যাদের অন্যান্য রোগের উপসর্গও আছে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে থাকে আইসিইউ সেবা। তবে যদি তাদের শুরু থেকেই নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা দেওয়া যেতে পারে তবে সেক্ষেত্রে অনেক সময়েই আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন নাও হতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন যে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তার অধিকাংশগুলোতেই কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহ নেই এমন অভিযোগ আমরাও শুনেছি। সেক্ষেত্রে সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপ্লাই সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোতে এখনই কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা চাইলেই সম্ভব না। আর তাই অক্সিজেন সরবরাহ যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

কুর্মিটোলা হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ‘যদি বর্তমান এই হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ শুরুও করা হয়ে থাকে তবে তা কোনোভাবেই জুন মাসের আগে শেষ করা সম্ভব হবে না।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা গড়ে তোলাটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। চাইলেই রাতারাতি সেটা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের বিষয়টির দিকে আমরা জোর দিচ্ছি।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেছেন, বাংলাদেশে ডেডিডেকেটেড করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন ইউনিটসমূহে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। এ বিষয়ে বলতে চাই যে বাংলাদেশে ডেডিডেকেটেড করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন ইউনিটসমূহে অক্সিজেন সরবরাহের কোনো ঘাটতি নাই। সারাদেশে সকল উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৩৯৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল বাদে আমাদের আটটি বিভাগে মোট ১৩ হাজার ৭৪৫ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের কোনো ঘাটতি বা সংকট নাই। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। যদিও এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো অক্সিজেন সরবরাহ নেই। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও ১২০ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ১২টি মিনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ সিস্টেম আছে। অনেক মেডিকেল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ উপলক্ষে আরও তিন হাজার ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এগুলো দেশে এসে পৌছাবে। তাছাড়া ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো ফের ব্যবহারের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিফিল করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাতে সেগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায়।’

অক্সিজেন করোনা করোনা মোকাবিলা করোনা রোগী করোনাভাইরাস কুয়েত মৈত্রী কুর্মিটোলা টপ নিউজ বাংলাদেশ হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কামাল আহমেদ মজুমদার গ্রেফতার
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ০১:৪০

সম্পর্কিত খবর