এবার পাঁচ তারকা হোটেলেও নেই ইফতার আয়োজন
২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২৯
ঢাকা: করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউন থাকায় এবার চকবাজারে বসেনি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারের পসরা। বেশরিভাগ মানুষ ঘরে থাকায় রাজপথ বা ফুটপাতেও নেই ইফতারের ভ্রাম্যমাণ দোকান। এমনকি হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় সেখানেও নেই ইফতার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ততা। এর বাইরে প্রতিবছরের মতো পাঁচ তারকা হোটেলের সুরম্য কক্ষেও এবার বসছে না শতশত পদের ইফতারি পসরা।
প্রতিবছর রমজান এলেই বিত্তবানদের ইফতার মানেই ছিল রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর বাহারি আয়োজন। আর হোটেলগুলোও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ঐতিহ্যবাহী খাবারের ইফতার মেন্যু দিয়ে। রমজানে তারকা হোটেলগুলোর দেশি-বিদেশি আধুনিক খাবারের ইফতারির আয়োজন থাকে। এবার প্রায় সব হোটেলের ইফতার বন্ধ। দুয়েকটি হোটেল আর নামি দামি রেস্টুরেন্ট সীমিত আকারে ইফতার ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে। তবে এটাও কতদিন চলবে সেটিও জানা নেই।
বিমানবন্দর সড়কের লা মেরিডিয়ান, গুলশানের ওয়েস্টিন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল আর সোনারগাঁ হোটেলগুলোর রমজানের প্রধান আকর্ষণ থাকতো দেশি-বিদেশি ইফতারের সমাহার। এবার এই হোটেল একদম ফাঁকা। নেই ইফতারির আয়োজন। প্রায় মাস খানেক আগেই হোটেলগুলোর শেফ-কর্মচারীদের অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন। ১৫ থেকে ২০ জন লোক নিয়ে কোনোরকম হোটেল রাখা হয়েছে। ভেতরে রয়েছেন কয়েকজন করে বিদেশি গেস্ট।
লা মেরিডিয়েন হোটেলের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষ হলেই ইফতারে এত বেশি মানুষের সমাগম হতো যে, দু-তিনদিন আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হতো। রাজধানীর অনেকেই পরিবারসহ এখানে এসে ইফতার করতেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ইফতারের কোনো আয়োজন নেই।
একই অবস্থা গুলশানে নতুন চালু হওয়া রেনেসাঁস হোটেলে। হোটেলটির কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অল্প কিছু জনবল দিয়ে তাদের হোটেল চলছে। কয়েকজন বিদেশি অতিথি হোটেলে অবস্থান করছেন। এর বাইরে হোটেলের আর কোনো কার্যক্রম নেই।’
দেশি-বিদেশি স্বাদের ইফতারি আয়োজনের মাধ্যমে বড় ধরনের আকর্ষণ আনার চেষ্টা থাকে চালু হওয়া নতুন হোটেলগুলোর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে মাত্র কিছুদিন আগে চালু হওয়া রেনেসাঁস হোটেল এখন বলতে গেলে বন্ধই রয়েছে।
এদিকে গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিন, ফোর পয়েন্টস ও আমারির ইফতার ডেলিভারি সেবা দিবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে এতেও তেমন সাড়া মিলছে না বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এভাবে সেবা করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যে কারণে তাদের ডেলিভারি সার্ভিসে তেমন অর্ডার এখনও আসেনি। সেবাটি কতদিন চলবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ওয়েস্টিন হোটেল তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, ডেলিভারি সেবা নিতে হলে আগের দিন অর্ডার করতে হবে। গুলশান-বনানী-বারিধারা কেবলমাত্র এই সেবা পাওয়া যাবে। তাদের ডেলিভারি ম্যান গিয়ে ইফতার পৌঁছে দিয়ে আসবে।
গুলশান ২ নম্বরে প্রিমিয়াম সুইটস এবার তাদের প্রিমিয়াম ইফতার ও সেহরি হোম ডেলিভারি দিচ্ছে। প্রিমিয়াম সুইটস তাদের ফেসবুকে পেজে জানায়, লকডাউনের সময়ে ডাইন-ইন বন্ধ। তবুও রমজানের দিনগুলোতে দুই দশকের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রিমিয়াম শুরু করেছে ইফতার ও সেহরি ডেলিভারি। কেউ যদি ইফতার নিতে চান তাহলে দুপুরের মধ্যেই জানিয়ে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব স্টাফ সেই ইফতার পৌঁছে দেবে। আর সন্ধ্যায় সেহরির অর্ডার দিলেও সেটি সময় মতো পৌঁছে দেবেন প্রিমিয়াম সুইটসের স্টাফ।