‘লুকোচুরির মধ্যেই’ খুলেছে ৫ শতাধিক পোশাক কারখানা
২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৯:৫০
ঢাকা: অনেকটা লুকোচুরির মধ্যেই ৫০০ এরও বেশি পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে রোববার (২৬ এপ্রিল)। সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে প্রথম থেকেই কিছু কারখানা কাজ চালিয়ে আসছিল। করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাড়তে থাকায় ওইসব কারখানা বন্ধ হতে হতে গিয়ে তা ঠেকে ২০ এর কোঠায়। তবে সরকার ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ালেও ‘অর্থনীতি সচল’ রাখতে পোশাক মালিকরা আর অপেক্ষা করেননি।
শুক্রবার ( ২৪ এপ্রিল) থেকেই কর্মচারী ও শ্রমিকদের ডেকে আনা হয়েছে পোশাক কারখানাগুলোতে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শনিবারও (২৫ এপ্রিল) অনেক শ্রমিকই কর্মস্থলে ফিরেছেন বিকল্প উপায়ে।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমএইএ সূত্রে জানা গেছে, রোববার তাদের সদস্যভুক্ত ৫০২টি পোশাক কারখানা খুলেছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ১৮টি, সাভার-আশুলিয়ায় ১২৯ টি, ঢাকায় ২৫টি, গাজীপুরে ২৩৮টি ও চট্টগ্রামে ৯২টি কারখানা খোলা হয়েছে।
আর দেশের নীটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, রোববার তাদের ১০ থেকে ১২টি কারখানা খোলা ছিল।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ২ হাজার ২৭৪টি। আর বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত ৮৩৩টি কারখানা চালু আছে।
এদিকে, কারখানা খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়টি এখনও গণমাধ্যমে স্পষ্ট করেনি বিজিএমএই। পর্যায়ক্রমে কারখানা খোলার বিষয়ে মালিকদেরও সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে সরকার ও মালিকপক্ষ প্রথম থেকেই কারখানা খোলা রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে। বিজিএমইএ’র পক্ষ খেকে মালিকদের পোশাক কারখানা বন্ধ করার নির্দেশনা না দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। সংগঠনটি এখনও অনেকটা সেই পথই অবলম্বন করেছে।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) রাতে বিজিএমইএ’র ওয়েবসাইটে মালিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অর্থনীতি সচল রাখতে সার্বিক পরিস্থিত বিবেচনায় পোশাক কারখানা খোলা রাখার নির্দেশনা বিজিএমইএ দেবে। সেই নির্দেশনা পাওয়ার আগ পর্যন্ত যেসব শ্রমিক গ্রামে আছে, তাদের ঢাকায় আসতে না বলার অনুরোধ করা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক পোশাক কারখানা খোলার নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে শুরুতে কারখানা সীমিত আকারে খোলা রাখা যাবে। ফলে প্রথম ধাপে কারখানার আশপাশে যেসব শ্রমিক থাকে, তাদেরই কাজে যোগদান করতে বলা যাবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় কোনো শ্রমিক ছাঁটাই না করার অনুরোধ করছে বিজিএমইএ।
এ ছাড়া যে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো শ্রমিককে অসমর্থিত ও অনুপযুক্ত উপায়ে ঢাকা নিয়ে আসা হলে সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএ কোনো সহায়তা করবে না বলেও ওই নির্দেশনায় বলা হয়।
এদিকে, শনিবার (২৫ এপ্রিল) দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘পোশাক শিল্পের ৮৬৫টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি আছে। এ পর্যন্ত তিন বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্ডার বাতিল হয়েছে। আমাদের ওপর কারখানা খুলে দেওয়ার চাপ আছে। অনেকের অর্ডার আছে।’
এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনক্ষণ বেঁধে, সীমিত আকারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খুলে দেয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে যদি অর্ডার চলে যায় তাহলে তা ফেরত আনা কঠিন হবে। তাই সীমিত শ্রমিক নিয়ে সীমিত আকারে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’
এমন পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নেতারা। তবে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি শনিবার রাতেও। বিজিএমইএ সভাপতি শনিবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোশাক কারখানা তো চালু করতেই হবে। এই খাত ছাড়াও তো অনেক কিছু চালু হয়ে গেছে।’
পোশাক কারখানা খোলায় সতর্কতা অবলম্বন বিষয়ে রোববার (২৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের কাছে আবারও চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ এসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
কারখানা খোলার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে গঠনটির পক্ষে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘তৈরি পোশাক কারখানায় চল্লিশ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যারা এখনও দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে, স্বল্প শিক্ষিত এবং করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তত সচেতন নয়। এদিকে পবিত্র মাহে রমজান মাস চলছে, সামনে পবিত্র ঈদ। এই সময়ে বিশাল শ্রমজীবী মানুষকে নিরাপদ কর্ম এলাকা, কর্মস্থলে অসংক্রমিত যাতায়ত, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করা দরকার। এসব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে একাধিক শিফট চালু করা যেতে পারে।’
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই শ্রম শিল্পে শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মী সুস্থ রাখার স্বার্থে পরীক্ষামূলকভাবে প্রশাসনের নজরদারিতে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় প্রথমে কারখানা খোলা রাখা যেতে পারে। শ্রমজীবী মানুষের সুস্থতা ও নিরাপত্তা শুধু কারখানা মালিকের উপর ছেড়ে দেওয়া সঙ্গত হবে না। সেজন্য প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরিবহন, শ্রম পরিদর্শক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন। অন্যথায় বিগত সময়ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে এবং বিদেশে পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমন অবস্থায় তৈরি পোশাক কারখানায় সংক্রমণ নিরোধ ব্যবস্থা, শ্রমিকের নিরাপত্তা, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে সরকার এর সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। এই সতর্কতা শিল্প কারখানার জন্য একান্ত আবশ্যক বলে মনে করেন সংগঠনটির সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন।
করোনাভাইরাস করোনার ঝুঁকি কারখানা পোশাক কারখানা শ্রমজীবী মানুষ শ্রমিক