Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উপকূলে নৌচলাচল ব্যবস্থা উন্নয়ন আটকে গেছে করোনায়


২৭ এপ্রিল ২০২০ ১১:২৫

ঢাকা: নৌ-নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করতে উপকূলীয় অঞ্চলের নৌচলাচল ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে মাসখানেক আগে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়ায় আটকে গেছে প্রকল্পের অনুমোদন। কবে নাগাদ প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে পারে, করোনা পরিস্থিতি সে বিষয়ে কেউই কিছু বলতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

‘এস্টাবলিস্টমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিন ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিন নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস)’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ঋণ থেকে ২৯২ কোটি ১২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় এই সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এর বাস্তবায়ন শেষ করবে নৌপরিবহন অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এখন একটি সংকটময় সময় পার করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে স্বাস্থ্য খাতে সরকারকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও কমে গেছে। ফলে এখন নতুন প্রকল্প অনুমোদন নয়, চলমান প্রকল্প সচল রাখাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া বিভিন্ন সুপারিশ প্রতিপালন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পরে গত মার্চ মাসের শেষ দিকে এটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়।

এরপর পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে পাঠানো হয় একনেক অনুবিভাগে। সেখানে একনেকের জন্য প্রকল্পের সার-সংক্ষেপও তৈরি করা হয়। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকলে ১৯ মার্চের পর আর কোনো একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পটির অনুমোদন পিছিয়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময়ও পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কশিনের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, প্রকল্পটি সমাপ্তির যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সে লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতিসংশের ‘কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি’ ও ‘সেফটি অব লাইফ অ্যাট সি কনভেনশনে’ বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেছে। ফলে নৌ-নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রাসঙ্গিক শর্তগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতা রয়েছে বাংলাদেশের। এর জন্য সমুদ্র উপকূলীয় স্থাপনাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ভেসেল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, জাহাজের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান পদ্ধতি, নৌ-চালনা সহায়তা, জাহাজের নিরাপত্তা, সতর্কীকরণ পদ্ধতি, দূরবর্তী জাহাজ চিহ্নিতকরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমগুলোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলে সাতটি লাইট হাউজ ও কোস্টাল রেডিও স্থাপন এবং ঢাকায় একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে চলমান জাহাজগুলোর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে নৌ-নিরাপত্তা ও সার্ভেইল্যান্স প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

নৌচলাচলে সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও পরিচালনা, আন্তর্জাতিক কনভেনশনের চাহিদা পূরণসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০১৪ সালের ১১ মার্চ প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছিল একনেকে। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। পরে ফায়ার ফাইটিং ওয়ার্কস, পরামর্শক বাবদ ভ্যাট ও গ্যাস লাইন ওয়ার্কস অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫৫ কোটি টাকা ৯৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী অনুমোদন পায়।

বর্তমানে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কংক্রিট টাওয়ারের পরিবর্তে স্টিল টাওয়ার নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত ঢালচরের পরিবর্তে চর কুকরিমুকরিতে উপকূলীয় রেডিও স্টেশন স্থানান্তর, সিডি ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ অর্থ বরাদ্দ এবং প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের স্বার্থে অন্যান্য অঙ্গের ব্যয় কমবেশি হওয়ায় প্রকল্পটি ব্যয় বাড়িয়ে ৬৮৭ কোটি টাকা এবং মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ধরে দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

উন্নয়ন উপকূল করোনা করোনা মোকাবিলা করোনাভাইরাস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নৌ চলাচল নৌ ব্যবস্থা বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর