Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চিরদিনই অন্ধকার থাকে না, আবার আলোর পথে যাত্রা করব’


২৭ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৩৪

ঢাকা: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের সবাইকে এখন এক হয়ে কাজ করতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাই মিলেই আমরা এই অবস্থার থেকে মুক্তি পাবো, ইনশাল্লাহ। কাজেই আমি মনে করি- চিরদিনই অন্ধকার থাকে না, আলো নিশ্চয়ই আসে। আমরা আবার আলোর পথে যাত্রা শুরু করব।

সোমবার (২৭এপ্রিল) গণভবনে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সূচনা বক্তব্যের সময় তিনি একথা বলেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা সমন্বয় তদারকির অংশ হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বিভিন্ন বিভাগে জেলাভিত্তিক ভিডিও কনফারেন্স করেন তিনি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন অচলাবস্থার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ধাক্কা। কারণ আজকে যে সব দেশে আমরা রফতানি করতাম করোনার কারণে সে দেশগুলো বন্ধ। তাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ। আবার আমাদের দেশেও সেই একই অবস্থা আমাদের করতে হয়েছে মানুষের নিরাপত্তার জন্য। কারণ এখানে মানুষের নিরাপত্তাটাই হচ্ছে আমাদের কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ, ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যুবরণকারী সব পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। এ ধরনের অবস্থা কিন্তু আমি পৃথিবীতে জানি না, আর আমরা দেখিনি। তবে জানা যায়,শত বছরে একবার নাকি এরকম একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়।’

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিনিয়ত রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে এবং সকলকে আমরা একটা নির্দেশ দিয়েছি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার। বাইরে মানুষের সঙ্গে না মেশা, বেশি লোকসমাগম না হওয়া, মানুষ থেকে দূরে থাকেন, পরিবার ঠিক আছে। বাইরের লোকের সঙ্গে যত কম মেশা যায়, কম যোগাযোগ রাখা যায়, সেটা সব থেকে ভালো। সেটাই সুরক্ষিত করে। কারণ এটি হচ্ছে অত্যন্ত সংক্রামক একটা ব্যাধি। এত সংক্রামক, এটা কার যে কখন হবে তা বোঝাও যায় না। এটিই হচ্ছে সব থেকে দুঃচিন্তার বিষয়।’

রাজশাহী বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি খুব ভালো একটা জিনিস দেখলাম। এই জেলাগুলো এখনও সেই রকম সংক্রমিত হয়নি, যথেষ্ট ভালো আছে। আমি মনে করি, এই বিষয়টা আপনাদের ধরে রাখতে হবে। যেন আর কেউ সংক্রমিত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন, সেটাই আমরা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী করোনার প্রাদুর্ভাবে কৃষিখাতকে সচল রাখার লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার কৃষি প্রণোদনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে আমাদের ক্ষুদ্র মাঝারি চাষি, কৃষিতে যারা সরাসরি কাজ করে থাকে। ডেইরি ফার্ম যাদের আছে মৎস্য ফার্ম যাদের আছে পোল্ট্রি ফার্ম যাদের আছে। প্রত্যেকেই ওইখান থেকে সহযোগিতা পাবেন। সকলেই কিন্তু ওইখান থেকে অর্থ নিয়ে কাজ করতে পারবেন এবং এখানে আমরা প্রায় ৯হাজার ৫শ কোটি টাকার ভর্তুকি দিচ্ছি। কাজেই এব্যাপারে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এছাড়াও বোরো ধান মৌসুমে ধান সংগ্রহে সরকারি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটা হচ্ছে আমাদের সংগ্রহে রাখা দ্বিতীয়টা হচ্ছে কৃষক পরিবারকে সহযোগিতা করা। সেটাও আমরা করে যাব ইনশাল্লাহ। আমাদের কোনো খাদ্য সংকট থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি যদি সবাই মিলে আমরা কাজ করি।’

পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশে কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আস্তে আস্তে আমরা চেষ্টা করব, আপনারা যদি নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এই সংক্রমণের হার কমাতে পারেন। মৃত্যুর হার গতকালকে পাঁচজন মারা গেছে। কিন্তু আমাদের মৃত্যুহারও কমুক। আমরা আস্তে আস্তে তাহলে আপনাদের যোগাযোগ যাতায়াত পণ্য বিক্রি, পণ্য পরিবহনের ব্যাপারে কিন্তু কোনো বাধা নেই। এরইমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে বলে দিয়েছি, পণ্য পরিবহনে কেউ বাধা দেবে না। পণ্য পরিবহনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।’

এছাড়াও আরও কীভাবে পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে যাতে জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানুষের জীবনযাত্রা অব্যাহত থাকে সেদিকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ আমাদের আসে, দুর্যোগ আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। আর এই দুর্যোগটা তো সারাবিশ্বব্যাপী। আজকে বিশ্বব্যাপীও আমরা সকলকে সহযোগিতা করছি, সেখান থেকে মুক্তি পেতে। বিশেষ করে আমার দেশের সবাইকে এখন এক হয়ে কাজ করতে হবে।’

‘মুজিববর্ষ উদযাপন করবো বলে অনেক অনেক কর্মসূচি আমরা নিয়েছিলাম। আমাদের দুভার্গ্য যে আমরা করতে পারিনি। তবে আমরা অনলাইনে করেছি। তারপরও আমি বলব, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাজীবন এদেশের মানুষের জন্যই সংগ্রাম করেছেন। মানুষের জন্যই ত্যাগ-তিতীক্ষা করেছেন। মানুষের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন তিনি। কাজেই সেই মানুষকে বাঁচানোটা আমাদের জন্য অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই তার এই প্রিয় বাংলাদেশের প্রিয় মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবনটা উন্নত করা, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানানা প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনা আসলে সকলের ক্ষতি করতে এসেছে কিন্তু আমরা এর থেকে আমরা দেশকে মুক্ত রাখব, জাতিকে মুক্ত রাখব, সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি যেন সচল থাকে, আমাদের পরিবহন বিশেষ করে আমাদের খাদ্য এবং চিকিৎসার সবকিছু যেন ঠিকমত করে চলে, ব্যবসা বাণিজ্য যেন স্থবির না হয়, আর বিশেষ করে এখন যেহেতু আমাদের ধান কাটার সময় কাজেই খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এটা আমাদের বিরাট দায়িত্ব, সেটাও যাতে অব্যাহত থাকে, সবদিকে নজর রেখে আমরা ধাপে ধাপে পদক্ষেপগুলো নেব।’

‘কাজেই আমরা সবাই আল্লাহ আব্বুলামিনের কাছে দোয়া করেন যেন বাংলাদেশ এই করোনা থেকে মুক্তি পায়, আমরা বাংলাদেশের মানুষ যেন ভালো থাকি, সুস্থ থাকি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর