Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শ্রীমঙ্গল র‍্যাবকে ভগবান অনেক বড় পুরস্কার দেক!’


২৮ এপ্রিল ২০২০ ০০:১০

ঢাকা: রোববার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টা। দেশের অনেক এলাকার মতো সিলেটের শ্রীমঙ্গলের গ্রামগুলোতে চলছে লকডাউন। এত রাতে যানবাহন দূরের কথা, মানুষের চলাচলই ছিল না। এমন সময় প্রসব বেদনা ওঠে শিল্পী রানী দাসের (৩০)। শুরু হয় রক্তক্ষরণও। হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তার শারীরিক অবস্থাও জটিল হয়ে উঠছিল। স্বামী রঞ্জিত দাস আশপাশের ১৫-২০টি সিএনজি অটোরিকশাচালকের বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করলেও লাভ হয়নি। করোনার এই সংকটকালে কেউ এগিয়ে আসেননি শিল্পী রানীকে হাসপাতালে নিতে।

বাস্তবতার ধাক্কায় বসে বসে ভগবানকে ডাকা ছাড়া আর কোনো পথ যেন পাচ্ছিলেন না রঞ্জিত। এমন অন্ধকার সময়ে যেন আলো হয়ে হাজির হলেন র‍্যাব কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম।

রঞ্জিতের ভাষায়, প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা শিল্পী রানী যখন একটি পা-ও ফেলতে পারছিলেন না, ত্রাতা হয়ে শামীম তাকে কোলে করে তুললেন গাড়িতে। নিয়ে গেলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসক-নার্স দ্রুতগতিতে তার প্রসবের ব্যবস্থা করলেন। শেষ পর্যন্ত সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দিলেন শিল্পী।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর কথা হচ্ছিল রঞ্জিত দাসের সঙ্গে। খানিকটা স্বস্তি নিয়েই বললেন, যখন ১৫-২০ জনকে অনুরোধ করেও সাহায্য পেলাম না, তখন বুঝতে পারছিলাম না কী করব। এর মধ্যে আমার ভায়রা ভাইয়ের ছেলে র‌্যাব অফিসে ফোন করে। ফোন পেয়েই শামীম স্যার যেভাবে ছুটে এসে সহায়তা করেছেন, এ উপকারের কোনো প্রতিদান হয় না। স্যার সময় মতো না এলে হয়তো বড় বিপদ হয়ে যেত আমাদের।

রঞ্জিত দাস আরও বলেন, আমরা তো গরিব মানুষ। শামীম স্যারকে দেওয়ার মতো কিছু নেই আমাদের। প্রার্থনা করি, ভগবান স্যারকে অনেক বড় পুরস্কার দিক।

কথা হয় র‍্যাব-৯-এর শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীমের সঙ্গেও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, রাতের ডিউটিতে ছিলাম। ক্যাম্প থেকে দূরেই ছিলাম ডিউটির কাছে। এর মধ্যেই খবর পেলাম ওই প্রসূতির। সঙ্গে সঙ্গে রওনা হয়ে যাই। যখন পৌঁছাই, রাত প্রায় ১২টা। প্রসূতি শিল্পী রানীর অবস্থা ছিল খুব সংকটাপন্ন। তাই দেরি না করে দ্রুত গাড়িতে তুলে হাসপাতাল নিয়ে যাই।

বিপদের সময় মানুষকে সহায়তা করাকে নিজের দায়িত্বের অংশই মনে করেন এএসপি শামীম। তিনি বলেন, আমাদের কাজ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু সবার আগে তো আমরা মানুষ। তাই মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে সবসময় চেষ্টা করি কিছু করার। এটুকু বলতে পারি, র‌্যাব কর্মকর্তা বলে নয়, কখনো পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করলেও মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা সবসময় থাকবে। অন্যদেরও তাই করা উচিত।

রঞ্জিত-শিল্পী দম্পতির কাছ থেকে পার্থিব কোনো উপহার পাননি শামীম। তবু যেন তার উপহার তিনি পেয়ে গেছেন। শামীম বলেন, কাউকে সহায়তা করে কোনো প্রতিদান প্রত্যাশা করি না। তবু কোনো না কোনোভাবে মানুষ প্রতিদান পেয়েই যায়। এই যেমন, শিল্পী রানীর সন্তানের নাম রাখার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছে। আমি প্রিয় ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকারের নামে নাম রাখতে বলেছি। এই যে ছেলেটির নাম রাখলাম, এই অনুভূতির তো কোনো তুলনা নেই। এটি অনেক বড় পাওয়া।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজ্জাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, মুমূর্ষু ওই প্রসূতিকে অবিলম্বে হাসপাতালে আনার প্রয়োজন ছিল। আমাদের অ্যাম্বুলেন্সটি তখন অন্য একটি জায়গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে একজনের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। এরকম সময়ে র‌্যাব কর্মকর্তা যেভাবে ছুটে এসেছেন, সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তার কারণে প্রসূতি ও নবজাতক সঠিক চিকিৎসা পেয়েছে। এতে দু’টি প্রাণ বেঁচে গেছে। এজন্য আমার পক্ষ থেকেও তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

র‍্যাব কর্মকর্তার এমন প্রশংসনীয় কাজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও রীতিমতো ভাইরাল। যার সহায়তায় র‍্যাব কর্মকর্তা এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেই শিল্পী রানী দাসের বোনের ছেলে নিরমল পাল সোমবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে র‌্যাব কর্মকর্তা শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নিরমল পাল তার পোস্টে লিখেছেন, গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে ১১রটা। আমার পিসির প্রসব বেদনা ওঠে। রক্ত ভাঙা শুরু হয়। কিন্তু বাচ্চা প্রসব হচ্ছিল না। সবাই বলছিল হাসপাতালে নিতে হবে। এত রাতে গাড়ি কোথায় পাব, সেই চিন্তায় টেনশন করছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি পাইনি। পরিচিত অনেক সিএনজিচালককে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। এমন সময় রাজু ভাই (উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে) আমাকে শ্রীমঙ্গল র‍্যাব বাহিনীর কমন্ডার, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নম্বর দেন। বলেন, তিনি নাকি মানুষকে সহায়তা করেন।

নিরমল লিখেছেন, তার কথা বিশ্বাস না করলেও কল দেই। বললেন দুই মিনিটের মধ্যে রওনা দেবেন। সে কথাও বিশ্বাস করিনি। পরে দেখি, তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে চলে এসেছেন। আমরা আশ্চর্য হলাম, পিসির হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। উনি সেটি বুঝতে পেরে তাকে কোলে করে গাড়িতে নিয়ে তুললেন। হাসপাতালে পৌঁছেও কোলে করে পিসিকে নামিয়ে একেবারে অপারেশন রুমে দিয়ে এসেছেন।

নিরমল লিখেছেন, এরকম মানুষও পৃথিবীতে আছে! শ্রীমঙ্গল র‍্যাবকে ভগবান অনেক বড় পুরস্কার দেক!

জানা যায়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার উত্তর বড় বিল গ্রামের আব্দুল মান্নান ও বিলকিস বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান এএসপি শামীম ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১৮ সালে তাকে র‍্যাবের শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম টপ নিউজ র‌্যাব অধিনায়ক এএসপি শামীম র‌্যাব শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প র‌্যাব-৯


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর