মেয়ে ফিরবে না জেনেও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মা
২৮ এপ্রিল ২০২০ ০৮:৫৬
ঢাকা: ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল। সকালে রাজধানীর শ্যামলী থেকে খিলগাঁও যাওয়ার জন্য উবারের একটি মোটরবাইক ভাড়া করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য। বাইকটি শেরে বাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে এলেই একটি কাভার্ডভ্যান পেছন থেকে সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে লাবণ্য রাস্তায় পড়ে গেলে তার ওপর দিয়েই কাভার্ডভ্যান চালিয়ে পালিয়ে যায় চালক। রাস্তায় ঝরে পড়ে আরেকটি তাজা প্রাণ।
সেই থেকে অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন লাবণ্য’র মা ফারজানা হক। মৃত্যুর একবছর পূর্ণ হলেও আজও মেয়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন মা। ফারজানা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাঝে মধ্যে মনে হয়, এই বুঝি লাবণ্য এসেছে, মা বলে আমাকে ডাকছে। তখন বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে ওঠে।’ এভাবে সড়ক দুর্ঘটনা যেন আর কোনো মায়ের কোল খালি না হয়- এজন্য বিচার ব্যবস্থাকে কঠোর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আর লাবণ্যের মৃত্যুর ঘটনায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চান ফারজানা হক।
লাবণ্যের বাবা এমদাদুল হক বলেন, ‘স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমার সংসারে আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। ছেলেটা থাকতো চুপচাপ আর মেয়েটা ছিল উল্টো। তার স্বপ্ন ছিল আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় সেই স্বপ্নটাও নিভে গেল। লাবণ্য ছিল মেধাবী ছাত্রী। ঘটনার দিন ব্যস্ততার কারণে সে উবারে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রওনা দেয়। কিন্তু কে জানতো ওটাই তার শেষ যাওয়া। ওই দুর্ঘটনা আমাদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে। মেয়েটা চলে যাওয়ার পর থেকে একদিনও না কেঁদে ভাত খায়নি ওর মা। প্রাণবন্ত মেয়েকে হারিয়ে আমার পরিবার যেন থমকে গেছে। কবে স্বাভাবিক হবে তাও জানি না। যাদের কারণে মেয়েকে হারিয়েছি তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।’
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার সিএমএম আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য ঢাকার তৎকালীন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদুল কবীর আগামী ৪ মে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন।
মামলা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে জানান, মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়ে গেছে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে বর্তমানে করোনারভাইরাসের কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। সাক্ষীরা যেন আদালতে এসে সাক্ষ্য দেন সেজন্য সমন পাঠানো হয়েছে। যদি সাক্ষীরা নিয়মিত আদালতে এসে সাক্ষ্য দেন তাহলে মামলাটির বিচার দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে। যেহেতু আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে গেছে, ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করব। আশা করছি, সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে আসামিরা খালাস পাবে।‘
২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে কাভার্ডভ্যান চাপায় ফাহমিদা হক লাবণ্যের মৃত্যুর পর শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলা দায়েরের একদিন পর আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকা থেকে কাভার্ডভ্যানসহ চালক আনিসুর রহমান ও রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং থেকে উবারের মোটরবাইক চালক সুমন হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আসামি আনিছুরের চারদিন ও সুমনের দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
২০১৯ সালের ৯ জুলাই মামলাটি তদন্তের পর দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম। একই বছরের ১০ অক্টোবর দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিম। তবে বর্তমানে অভিযুক্ত দুই আসামি জামিনে রয়েছে।